পজিটিভ বাংলাদেশ

লকডাউনে সাজছে সাতছড়ি ও কালেঙ্গা

চলছে লকডাউন। বন্ধ আছে হবিগঞ্জ জেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় হৈ-হুল্লোড় নেই। শান্ত পরিবেশ। এরমধ্যে বন্যপ্রাণীরা নিজেদের মতো করে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। পরিদর্শনকালে এদৃশ্য দেখা গেছে। 

এসময় দেখা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এসব বনের ফটকের কাছে শুধু বন প্রহরী ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। আগে যেখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের আগমন ঘটতো, এখন সেখানে কর্তব্যরতরা ছাড়া কেউ নেই।

সাতছড়ির সহকারী হেডম্যান বন প্রহরী আশিষ দেববর্মা জানান, করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে উদ্যানে পর্যটক সমাগম বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে বন নিজের মতো করে সাজছে। মানুষের উপস্থিতি না থাকায় প্রাণীগুলো স্বাধীনভাবে বিচরণ করছে। করোনা পরিস্থিতিতে পুরো উদ্যানই নীরব। এখন সকালও গভীর রাতের মতো কোলাহলমুক্ত।

করোনা কারণে যান চলাচল কমায় কমেছে দূষণ। এতে প্রকৃতিও প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে। বৃক্ষরাজি ফিরে পেয়েছে লাবণ্য। মানুষের পদচারণা না থাকায় উদ্যানের লতাপাতা কিংবা নাম না জানা বুনো ফুলেরাও যেন অবাধ স্বাধীনতায় বেড়ে উঠছে। একই কথা জানালেন, কালেঙ্গার কালিয়াবাড়ি পুঞ্জির হেডম্যান বন প্রহরী বিনয় দেববর্মা। 

সাতছড়ি উদ্যানের ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯১২ সালে। ওই বছর প্রায় ১০ হাজার একর দুর্গম পাহাড়ি জমি নিয়ে গঠিত রঘুনন্দন হিলস্ রিজার্ভই কালের পরিক্রমায় আজকের উদ্যান। অবশ্য জাতীয় উদ্যান হওয়ার ইতিহাস বেশি দিনের নয়। এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস। রয়েছে বন বিভাগের লোকজন। 

পর্যটকদের জন্য চালু করা প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরি—সবই এখন নিস্তব্ধ।

উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরও আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ। সরীসৃপের মধ্যে আছে কয়েক জাতের সাপ।

কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান। সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। মানুষের উপদ্রব কমায় প্রাণীদের বিচরণ বেড়েছে। দূষণ কমায় নিজের মতো করে সাজছে সাতছড়ি উদ্যান।’ 

এদিকে প্রাপ্ত এক তথ্যমতে, রেমা-কালেঙ্গা বনে রয়েছে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম। আছে বিরল প্রজাতির পাখি ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল। আছে উল্টোলেজি বানর, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর, পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বন শুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু। 

রয়েছে কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা এমন আঠারো প্রজাতির সাপ। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়াং এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করে আসছে। সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পর্যাপ্ত উপকরণ থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। 

হবিগঞ্জ জেলার সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন বলেন, ‘এ অভয়ারণ্যটি রক্ষা করতে বনরক্ষীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। পর্যটক সমাগমের কারণে এখানে রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। তবে পুরোপুরি চালু হয়নি। এখানে আসার বাকী রাস্তা ও রিসোর্ট চালু হলে পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে করোনায় এ অভয়ারণ্যটি বন্ধ আছে।’