পজিটিভ বাংলাদেশ

খুলনায় তুলশীমালা ধান চাষে সম্ভাবনা 

ধানের নাম ‘তুলশীমালা’। স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অত্যন্ত উচ্চমানের সুগন্ধী ধানের জাত এটি। ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা ও আশেপাশের কিছু এলাকার চাষিরা শখের বসে জামাই বা আত্মীয়স্বজন আপ্যায়নে এই সুগন্ধী ধান চাষ করে থাকেন। অনুরূপ সখের বসে খুলনায়ও এ ধানের চাষ হয়েছে। এসেছে সাফল্য। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে মাত্র ২০-২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ‘তুলশীমালা’ ধান চাষ হয়। এর শতকরা ৫০ ভাগই আবাদ হয় শেরপুর জেলায়। উচ্চফলনশীল না হলেও এই ধানের চালের কদর এখনো বেশি। সুগন্ধী কালোজিরা ধানের চালের চেয়েও আকারে ছোট ‘তুলশীমালা’। এ ধানের চালের যে কোনো প্রকারের খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ধান, ধানের খড় থেকে শুরু করে মাঠময় সুগন্ধ ছড়ায়।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের দপ্তর সূত্র জানান, গত আমন মৌসুমে ওই অঞ্চলে ২১ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে ‘তুলশীমালা’ চাষ হয়। এর মধ্যে শেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে এ ধান চাষ হয়। হেক্টর প্রতি চালের উৎপাদন ছিল ১.৫৭ মেট্রিক টন।

এদিকে, পদ্মার দক্ষিণ-পশ্চিম পারের ২০টি জেলার মধ্যে ‘তুলশীমালা’ ধানের এই জাতটি গত আমন মৌসুমে প্রথম চাষ হয় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার দাউনিয়াফাদ গ্রামে। পাশের গুপ্তমারী গ্রামের রণজিৎ মন্ডল ৫ শতক জমিতে এই ধান চাষ করেন। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান শখের বশে শেরপুর থেকে এই ধানের মাত্র দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করে ওই কৃষককে দেন এবং চাষ তত্ত্বাবধান করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা এস এম আতিয়ার রহমান জানান, এই ধানটি লবণাক্ত ঊপকূলীয় এলাকায় হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু বাস্তবে ভালো হয়েছে। বটিয়াঘাটার স্থানীয় রানী স্যালুট, হরকোচ, কাচড়া জাতের একটি ধানের আকার ও ওজনের সমান তুলশীমালা ধানের ৩টি ধান। তুলশীমালা ছোট আকারের এবং রঙ পাকলে ধানের ছড়া দেখে সত্যিই মনে হয় ধান দিয়ে গাঁথা মালার মতো।

আতিয়ার রহমান আরও জানান, এই ধানের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ধানের ফুল আসার পর থেকে পাকা পর্যন্ত পাঁচবার রঙ পাল্টায়। প্রথমে হালকা সবুজাভ, এরপর কিছুটা অ্যাশ, এরপর হালকা জাম রঙ, এরপর গাড় জাম রঙ এবং শেষে কালো ও অ্যাশ মিলিয়ে নতুন একটি রঙ ধারণ করে। ধানের গাছের উচ্চতা ৫০-৫২ ইঞ্চির মতো।  ধানের আয়ুষ্কাল ১১০-১২০ দিন। 

একটি শীষে ৯০-১২০টি ধান পাওয়া যায়। পাঁচ শতক জমিতে দেড় মণ ধান পাওয়া গেছে। সে হিসেবে একর প্রতি ৩০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। সবটুকু ধানই বীজ হিসেবে আগামী আমন মৌসুমে লাগানোর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তুলশীমালা ধান দেখে অনেকেই চাষ করতে বীজের চাহিদা জানিয়েছেন। এর মধ্যে এ বছর ৫-১০ জনকে কিছু বীজ দিয়ে চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খুবির ল্যাবে এই ধান নিয়ে অধিকতর গবেষণা করে চালের কিছু বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো জাতে প্রবেশ করানো যায় কিনা সে বিষয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ধানের বীজ সংগ্রহ ও আগামী মৌসুমে গবেষণার জন্য তা রোপণ এবং টিস্যুকালচারও করববো। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত প্রাচীন জাতের স্থানীয় জলবায়ু সহিষ্ণু এই ধানের চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এছাড়াও মূল্যবান ভিটামিন ও মিনারেলসহ অন্যান্য গুণ রয়েছে। বাজারে তুলশীমালা ধানের চাল খুব কম পাওয়া যায়। তবে ঢাকা ময়মনসিংহ বিভাগে পাওয়া যায় বেশি। প্রতিকেজি চাল ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তুলশীমালা ধানের চালই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়।