পজিটিভ বাংলাদেশ

কুকুরের জন্য রানার প্রেম

প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসায় যখন প্রতারণা মুখ্য, মায়ের ভালোবাসায় যখন স্বার্থের গন্ধ, বাবার ভালোবাসায় যখন ধর্ষণের আতঙ্ক, চারদিকে যখন স্বার্থের লড়াই, সেসময়ে কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা প্রকৃত ভালোবাসার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এমনই এক ব্যতিক্রম ভালোবাসা দেখিয়ে যাচ্ছেন রেজাউল করিম রানা (৩৭)।

রানা থাকেন লালমনিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে। প্রতিদিন নিয়ম করে রাত ৯টায় প্রিয় শহরের ফুটপাতে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন। পশু প্রেমী এই যুবকের দেখা মেলে তার ভালোবাসার কুকুরগুলোর সঙ্গে। ঠিক একই সময় হাজির হয় বেশ কিছু বেওয়ারিশ কুকুর। রানা কুকুরগুলোকে পরম যত্নে খাবার খাওয়ান, হাত বুলিয়ে দেন।

রানা ডা. মো. জমশেদ আলী রাজুর বড় ছেলে। সপরিবারে মিশন মোড়ের সোনামণি ভিলায় বসবাস করেন। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে বিএসসি শেষ করে বাড়ির সাথে নিজেদের মার্কেটেই কম্পিউটার ও মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ব্যবসা করেন।

গত বছরের মার্চের ২৬ তারিখ থেকেই রানা ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কুকুরগুলোর দিকে। তার এই পশুপ্রীতির এক বছর পার হলো। যখন করোনার থাবায় সব কিছুই বন্ধ। লকডাউনে যখন সমাজের সব কিছুই থমকে গিয়েছিল। নাভিশ্বাস ওঠেছিল নিম্নবিত্ত থেকে সব স্তরের মানুষের, তখন থেকেই রানার এই ভালোবাসা দেখে পথচারীরাও থমকে দাঁড়ান, একটু দেখেন।

দীর্ঘ দিনের এই প্রাণী প্রেমিক রেজাউল করিম রানা বলেন, ‘ওদের গত বছর ২৬ মার্চ দুপুরে যখন প্রথম ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখি, তখন কেমন যেন একটা মায়া লাগলো আর সেই মায়া থেকে এই ভালোবাসা। বাড়ির ভেতর থেকে প্রথমে খাবার এনে দেওয়ার পর খাওয়া শেষে ওরা বসে থাকলো। রাতে বাসায় ঢুকতেই দেখি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আবার খাবার দিলাম, ওরা খাওয়া শেষে আর কোথাও গেলো না, তখনই সিদ্ধান্ত নেই ওরা আমার কাছেই থাকবে। সবার রিজিকদাতা তো সৃষ্টিকর্তা। আমি নাহয় ওদের একটু দেখাশোনা করবো। আর ভালোবাসা তো শুধু মানুষের জন্য নয়। সেই থেকে একসঙ্গেই আছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি একটি মা কুকুর দুটি বাচ্চা দিয়েছে। কুকুর ছানা দুটি সখ করে দু’জন নিয়ে গেছে। আরেকটি কুকুর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। বাকিরা সকালে বাসায় যা থাকে, সেটা খেয়েই বের হয়। দুপুরে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করলেও খেতে আসে না, একেবারে রাত ৯টা বাজলেই বাড়ির গেটের সামনে কখনো ওরা আমার জন্য অপেক্ষা করে, কখনো আমি। রাতে ওদের খাবারটি নিজ হাতে ভাগ করে দেই, ওরা সুশৃঙ্খলভাবে খেয়ে আমার বাড়িসহ আশেপাশে পাহারা দেয়।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী রহিম বাদশা (৩৩) বলেন, ‘মিশন মোড়ে বেশ কয়টি খাবার হোটেল রয়েছে, যেগুলো করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম লকডাউনে পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ঠিক সেই সময় দেখেছি হোটেলগুলোর উপর নির্ভর করা অনেক কুকুরকে খেতে দিতো রানা। রাতে এখনো দেখি কুকুরদের অনেক আদর করে নিজ হাতে খাওয়ায়। এটি ভালো কাজ, অবশ্যই প্রশংসনীয়।’

ফল ব্যবসায়ী সুলতান হোসেন বলেন, ‘এলা মাইনষে মাইনষোক না খাওয়ায়। মেলা দিন থাকি দেখং ছোয়াটা কুত্যাগুল্যাক খিল্যায়, আল্লাহ ওমার ভালো কইরবে।’ বলছিলেন, এখন তো মানুষ মানুষকে খেতে দেয় না, রানা কুকুরগুলোকে খাবার দেয়, আল্লাহ তার ভালো করবেন।