পজিটিভ বাংলাদেশ

৫০২টি নরমাল ডেলিভারি: চর ফলকন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দৃষ্টান্ত

লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত চর ফলকন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। প্রসূতি সেবা দানে এই কেন্দ্রটি অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। মেঘনা পাড়ের নদী ভাঙ্গা দুটি ইউনিয়নের গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের আপন ঠিকানা এটি। 

ইতোমধ্যে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশসহ পাশ্ববর্তী এলাকাতেও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিনা খরচে সন্তান প্রসব শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান মায়েরা। চলতি মাসে ৪০ জনসহ নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে গত এক বছরে ৫০২ জন প্রসূতি মা নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন, যা একটি উপকূলীয় এলাকার জন্য বিরল।

হঠাৎ করে এই কেন্দ্রের বদলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশিদের বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবায় একটি সিএনজি ও আসবাবপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবে সফল হয়ে ইতোমধ্যে উপজেলাভিত্তিক শ্রেষ্ঠ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চরফলকন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি।

নরমাল ডেলিভারি হওয়া মায়েরা জানান, নরমাল ডেলিভারির শুরুতে ভয় লাগলেও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রটির মাঠকর্মী ও চিকিৎসকদের সাহসে নিরাপদে তাদের সন্তান প্রসব হয়েছে। এতে একদিকে যেমন খরচ কমেছে, অন্যদিকে তারা সুস্থ আছেন।

হোসনেয়ারা এলাকার একজন বাসিন্দা। তার ছোট বোন গর্ভবতী। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গর্ভের বাচ্চা ওপরে উঠে গেছে, দ্রুত অপারেশন করতে হবে। ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। পরদিন লোকমুখে এই কেন্দ্রের কথা শুনে এখানে আসেন। পরে এখানে বিনা অপারেশনে তার বোনের একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়।

পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) মনির উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আশপাশে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, এখানে ২৪ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। লেখা অনুযায়ী সেবার কোনো হেরফের হয় না। দিন-রাতে সেবাতে কোনো ভেদাভেদ নেই। যখনই প্রসূতি আসেন, তখনই সেবা দেওয়া হয়। অনেক সময় গভীর রাতে উঠে সন্তান প্রসব করাতে হয়। 

গত এক বছরে এই কেন্দ্র থেকে ৮৯৪ জন গর্ভবর্তী নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে এ কেন্দ্রেই ৫০২টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। সন্তান ভূমিষ্টের পর চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫৮ জন। এছাড়া গত বছরের জনসংখ্যা দিবসে উপজেলা ভিত্তিক মূল্যায়নে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এ কেন্দ্রটি। 

মনির উদ্দিন বলেন, ‘প্রসূতি আসলে তাকে প্রথমে ভালোভাবে দেখা হয়। যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, তাহলে উপজেলা ও জেলা শহরের সরকারি বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেবার মান বৃদ্ধিতে প্রতি মাসে ১০টি স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠক করা হয়। যেখানে প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।’

চরফলকন ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রসূতিসহ ইউনিয়নবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটি সিএনজি, নরমাল ডেলিভারির জন্য স্ট্রেচার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিসহ নানা উপকরণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে এই ইউনিয়নে বসবাসরত ১৪ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।’ এসময় স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, ‘চরফলকন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি কমলনগরের জন্য একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। পূর্বের তুলনায় তাদের সফলতা রয়েছে অনেক। তবে ওই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার স্বল্পতার কারণে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ যদি দেওয়া যেত, তাহলে প্রসূতি সেবা ও চিকিৎসার মান আরও ভালো হতো, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।