পজিটিভ বাংলাদেশ

২০০ টাকার ব্যবসায় স্বপ্ন বুনছেন যারিন

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যখন করোনা সংক্রমিত হয়, তার ঠিক দু’মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেন সদ্য এইচএসসি পাস করে আসা শিক্ষার্থীরা। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় ক্যাম্পসে পা রাখেন কেউ কেউ। কিন্তু তাদের স্বপ্নটা যেন ছোঁয়ার আগেই কোথায় মিলিয়ে গেলো। 

নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ, বন্ধুত্বের আড্ডা আর গান, ক্লাসের ফাঁকে ডাকসুতে নাস্তা আর টিএসসির চায়ে ব্যস্ত বিকেল এমন স্বপ্ন নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়ে পড়াশোনা করতে আসেন। ঠিক সে সময়টাতে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সব কিছু ফেলে প্রাণের মায়ায় শিক্ষার্থীরা পরিবারের কাছে ফিরে যায় হতাশা নিয়ে। পড়াশোনা নেই, ক্লাস নেই সব মিলিয়ে একপ্রকার একঘেয়ে সময় পার হয়েছে গেলো বছরটায়। কিন্তু এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা অলস সময় কাজে লাগাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এফ- কমার্সে (ফেসবুক কমার্স) বেশ সক্রিয় অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

নারায়নগঞ্জের মেয়ে যারিন তাসনিম, তিনিও অন্যদের মতো ২০১৯-২০ সেশনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে। কিন্তু মাস দুই পার হতেই অতিমারি করোনার প্রভাবে সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র দু’মাস ক্লাস করতে পেরেছেন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর বাসায় ফিরতে হয় তাকে। কিন্তু অলস সময়টাকে কাজে লাগাতে নানারকম পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশনও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বিকল্প চিন্তা করতেই হচ্ছে একপ্রকার বাধ্য হয়ে। তখন বিসিক থেকে '‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন কোর্স’ নামে একটা প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান যারিন। সেখান থেকে নিজের পরিকল্পনা বাড়াতে থাকেন। এই সময়টাতে পরিবারকে কাছে পেয়েছেন। বাবা-মায়ের সমর্থন ছিল পুরোপুরি। বাবা মায়ের সমর্থন না পেলে হয়তো যারিনের ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা হতো না।

কিন্তু কী নিয়ে শুরু করবেন সে ভাবতেই সমস্যায় পড়ে গেলেন। প্রথমে আঁকাআঁকি করতেন। মা-বাবা সেগুলার প্রশংসা করতেন। ম্যান্ডেলা চিত্র, কাগজ দিয়ে গিফট বক্স, শোপিস আরও নানা কিছু করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সেগুলোতে সাড়া পাননি। পরে কাপড়ের মালা বানানো শুরু করেন, ১টা মালা সেল হয়েছিল যারিনের, যা সত্যিই খুব অবিশ্বাস্য ছিল তার কাছে। কিন্তু মালাতেও এত সাড়া পড়েনি। তারপরেও হাল ছেড়ে দেননি। কুশির কাজ কিছুটা শিখে নিয়েছিলেন মায়ের থেকে, সেটা দিয়েই শুরু করেন।

তারপর উলের কাজ দিয়ে শুরু করেছিলেন। উলের ফোন কভার ছিল মেইন প্রোডাক্ট। কিন্তু মাস্ক, ল্যাপটপের কভার, লেডিস টি-শার্ট, গাউন, ঘি, কর্নফ্লাওয়ার, কিছু বিউটি প্রডাক্ট ও আছে পেজে এখন। প্রথম অর্ডার আসে যারিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু শাইরি থেকে, তিনি দুইটা ফোন কভার অর্ডার করেছিলেন। তখন মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে ম্যাটারিয়াল এনে, তারপর ফোন কভার সেল করেছেন, সেটাই ছিল শুরু।

শুরুটা হয়েছিল ২০০ টাকা দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এবং বন্ধুদের সমর্থন পেয়েছিলেন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থনে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হতে হয়নি যারিনের৷ তবে অনেকে নেগেটিভ মন্তব্য করেছেন মেয়ে কেনো ব্যবসা করবে অনলাইনে। কিন্তু সবার সমর্থনে থেমে যাননি, এগিয়ে গেছেন উদ্যোমে। নতুন অবস্থায় অনেক কিছুতে সমস্যা হতো, কিন্তু সমস্যার মোকাবিলা করতে করতেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ব্যর্থ হওয়ার পরেই হয়েছেন সফল।

২০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন তার ফেসবুক পেজ থেকে প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে আয় হয় প্রতিমাসে গড়ে ১০/১৫ হাজার টাকার মতো। করোনাকালীন সময়টাকে কাজে লাগাতেই পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিজের ছোট এই এফ কমার্স ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি।

নিজের ব্যবসা নিয়ে যারিনের মতামত, অবশ্যই আমি চাই আমার এই বিজনেস আরও বিস্তৃত হউক। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বিজনেস প্রসারিত করার চিন্তা আছে। সেই সাথে সাধারণত মানুষ থেকে ধরে সবাই যেন আমার বিজনেস ‘Sprinkles’-এর সেবা নিতে পারে, সেটা চাই।

পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ে নিত্য নতুন পণ্য নিয়ে আসতে চান এই তরুণ নারী উদ্যোক্তা। ভবিষ্যতে বিজনেসের সেবার মান আরও উন্নত করার পরিকল্পনা আছে তার।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।