পজিটিভ বাংলাদেশ

তেঁতুলিয়াতেও চাষ হচ্ছে ‘সূর্যডিম’ আম 

বিশ্বের সবচেয়ে দামি এবং সুস্বাদু ‘সূর্যডিম’ জাতের আম চাষ হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সমতল ভূমিতে। দেশের মধ্যে সূর্যডিম আমের সবচেয়ে বড় বাগানও এখানে। তেঁতুলিয়া উপজেলায় কাজী মাহবুবুর রহমান নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বাগান গড়ে তুলেছেন। বাগানে রয়েছে ৩৩০টি ‘সূর্যডিম’ জাতের আম গাছ।

বাগানের অবস্থান উপজেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা কাজীপাড়া গ্রামে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সুস্বাদু এই আম। সবুজ, বেগুনি আর গাঢ় লাল রঙের মিশ্রণে দেখতে অনন্য সুন্দর এই আম প্রত্যেক গাছে ৫০ থেকে ৬০টি করে ধরেছে। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের এই আম ইতোমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকা দরে। সৌখিন আমভক্তরা এই আম কিনছেন। 

কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, বাগানে শুরুতে তিনি ২০০ সূর্যডিম আমগাছের চারা লাগানো হয়। পরে আরও ১৩০টি চারা লাগান তিনি। বাগানে সূর্যডিম আমের ফলন শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে। এই আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জমি আমার হলেও মূলত আমার দুই মেয়ে- মেজর কাজী মৌসুমী (অব.) এবং সাংবাদিক কাজী মহুয়া এই আমবাগান করেছেন। তারাই ২০১৭ সালে নিকটাত্মীয়ের কাছে এই আমের বর্ণনা  ‍শুনে ঢাকা থেকে চারা সংগ্রহ করে পাঠায়।

কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, তেঁতুলিয়ার সমতল জমিতে এই আমের প্রচুর ফলন হয়। প্রযুক্তি এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে এখানকার সূর্যডিম আম রপ্তানিও করা যাবে। এছাড়া, সরকার উদ্যোগ নিলে এই আমের চারা উৎপাদন করে আগ্রহী চাষিদের কাছে পৌঁছানো যাবে।

 

কাজী পাড়া গ্রামের এই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সূর্যডিমই নয়, আরও কয়েক প্রকার বিদেশি জাতের আমের চাষ করছেন কাজী মাহবুবুর রহমান। ৮ একর জমিতে তিনি পিউজাই, বারি-৪, ব‌্যানানা এবং রেড পালমা জাতের আমের চাষ করছেন। প্রত্যেক প্রজাতির আমের গাছে ভালো ফলন হয়েছে। এবছর আরও ৪ একর জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা লাগাচ্ছেন। এই আমের বাগান দেখতে আসছেন অনেকে। তাদের অনেকেই এসব প্রজাতির আমের বাগান করার আগ্রহও প্রকাশ করছেন। 

‘সূর্যডিম’ আম জাপানের মিয়াজাকি এলাকায় প্রথম চাষ হয়। তাই জাপানে এই আম মিয়াজাকি নামে পরিচিত। বিশ্বময় রেড ম্যাঙ্গো বা এগস অব সান নামেও এই আম পরিচিত। তবে, বাংলাদেশে এই আম ‘সূর্যডিম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এই আমের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি এবং তেঁতুলিয়ায় এই আমের চাষ শুরু হয়েছে। বিশ্ববাজারে এক কেজি মিয়াজাকি আমের দাম প্রায় ৭০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার টাকা। তবে এখনও এই আমের কথা দেশের অনেকেই জানেন না। 

সৌন্দর্য, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে সেরা হওয়ায় বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। সেই তুলনায় বাংলাদেশে এই আমের উৎপাদন কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তেঁতুলিয়ার সমতল ভূমি সূর্যডিম আম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজী মাহবুবুর রহমানের সূর্যডিম আমের বাগান দেখেছি। প্রচুর ফলন হয়েছে। আমের প্রকৃতি ও স্বাদও ভালো। আমরা মনে করছি, এই এলাকায় সূর্যডিম আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সূর্যডিম নয়, বিদেশি উন্নত জাতের নানা প্রজাতির আম চাষও সম্ভব এই উপজেলার সমতল ভূমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব আম চাষে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।