পজিটিভ বাংলাদেশ

নতুন জাতের আখে মিলবে বেশি চিনি ও গুড়

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) থেকে একটি নতুন জাতের আখ উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিএসআরআই-৪৮ নামের এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং অধিক চিনি-গুড় ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। ইতোমধ্যে জাতটি মাঠেও অবমুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা ১১ বছরের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে আখের নতুন ভালো একটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ১৭ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৫তম সভায় এ জাতটি অবমুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ২০০৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের দু’টি আখের জাতের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ক্লোনটিকে পুনরায় নিজেদের মধ্যে সংকরায়ণ করে ২০১১ সালে আই ১১১/১১ ক্লোন নির্বাচন করা হয়। এরপর প্রাথমিক ফলন পরীক্ষা, অগ্রবর্তী ফলন পরীক্ষা, আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষাসহ বেশ কিছু গবেষণার মাধ্যমে এটিকে নতুন জাত হিসেবে অবমুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। পরে জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় সব সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে জাতটি অবমুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, বিএসআরআই-৪৮ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি ৯৩.৫০ থেকে ১২১.৫২ টন, যা বহুল প্রচলিত চেকজাত ‘ঈশ্বরদী ৩৯’ জাতের চেয়ে ৭.৩৬ শতাংশ বেশি। এর চিনি ধারণক্ষমতা ১২.০৬ থেকে ১৫.১১ শতাংশ এবং গুড় আহরণ হার ১০.৭৫ শতাংশ। ওই জাতের চেয়ে যথাক্রমে ০.৩৮ শতাংশ এবং ০.৮৫ শতাংশ বেশি। জাতটি মোটা এবং স্মার্ট ও উইল্ট রোগ প্রতিরোধী। এতে লাল পচা রোগ দেখা যায় না। পাতার ধার কম হওয়ায় এই আখের ক্ষেতে কাজ করাও সহজ।

তিনি বলেন, এই জাতটি যদি আমরা চিনিকল ও চিনিকল বহির্ভূত এলাকায় সম্প্রসারণ করতে পারি তাহলে দেশে চিনি ও গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হবে। এই জাতটি চাষ করে গুড় উৎপাদনকারী কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। কারণ এই জাতে গুড় আহরণ ক্ষমতা অনেক বেশি। পাশাপাশি চিনি ধারণ ক্ষমতাও বেশি থাকায় মিল জোনে এই জাতটি উৎপাদন করে মাড়াই করলে বেশি চিনি পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রজনন বিভাগ) ড. রহিমুল আলম বলেন, প্রথমে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি আমাদের উদ্ভাবন নিয়ে মাঠ মূল্যায়ন করে। তারা মূল্যায়ন করার পর দেখা যায় এর সাথে আমরা যে স্ট্যান্ডার্ট জাত ব্যবহার করেছি, সেই জাতটির আখ আগের জাতটির চেয়ে মোটা। যে কারণে ফলন অনেক বেশি। তারপর তারা জাতটি অবমুক্তির জন্য সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় জাতটি অবমুক্তি ঘোষণা করা হয়।

রহিমুল আলম বলেন, আখের পাতায় কোণায় ধার থাকে। যার কারণে চাষি ও শ্রমিকরা জমিতে কাজ করতে খুব কষ্ট পেতেন। তাদের দাবি ছিল, এমন একটি জাত উদ্ভাবনের, যাতে পাতার কোণায় ধার থাকবে না। আমরা সেই চিন্তা মাথায় রেখে গবেষণা করে এই জাতটি পেয়েছি। যাতে তুলনামূলক পাতার কোণায় ধার অনেক কম। কৃষক স্বাচ্ছন্দে আখের ক্ষেতে কাজ করতে পারবেন।

তিনি বলেন, চাষি এই জাতটি করবে এই জন্য জাতটি বন্যা সহিঞ্চু, জলাবদ্ধতা সহিঞ্চু। সে অঞ্চলে এটা চাষ করে লাভবান হবেন। বিদ্যমান জাতের পাশাপাশি কৃষক নতুন এই জাতটি চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন। আগামীতেও নুতন নতুন জাত উদ্ভাবনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।