পজিটিভ বাংলাদেশ

নার্সারিতে শিক্ষার্থী আখির সাফল্য 

আখি আক্তার। বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈটপুর গ্রামের মেয়ে। ২০২০ সালে দিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলাফল পাওয়ার পরে কচুয়া উপজেলার মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। এর মধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। করোনা রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। আর এই বন্ধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আখি এখন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। বাড়ির সামনের এক চিলতে জায়গায় গড়ে তুলেছেন তার স্বপ্নের স্বপ্নপুরী নার্সারি। 

২০২০ সালে অক্টোবর মাসে গড়া মাত্র দেড় শতক জমির নার্সারিতে গোলাপ, নাইটকুইন, জবা, ড্রাগন, পেপে, বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, করমোচাসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ প্রকার চারা রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সৌখিন গাছ প্রেমীরাই আখি আক্তারের মূল ক্রেতা। কোনো বাইরের শ্রমিক ছাড়া মাকে সাথে নিয়ে নার্সারির পরিচর্যা করেন আখি। মা হেলেনা বেগমও মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। 

আখি আক্তার বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হই। এর মধ্যে দেশে সব বন্ধ হয়ে যায়। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কতদিন আর ঘরে বসে থাকা যায়। চারা-গাছ এসবের প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তাই বাবা-মায়ের কিছুটা অমত সত্ত্বেও বাগেরহাট শহরের হাইব্রিড নার্সারিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। তিন মাসের প্রশিক্ষণে নার্সারির কাজকর্মকে মোটামুটি আয়ত্ত করি। অনেক কষ্টে মা-বাবাকে রাজি করে যশোরের বেনাপোল থেকে চারা সংগ্রহ করে গড়ে তুলি নিজের নার্সারি। 

নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে আখি বলেন, আমি চাই নার্সারির মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে। যদি বড় একটি জায়গা আর একটু সহযোগিতা পাই, তাহলে আমি আমার নার্সারি অনেক বড় করতে পারবো।পাশাপাশি এলাকার অসহায় নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এই নার্সারি থেকে। 

আখির মা হেলেনা বেগম বলেন, করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় নার্সারিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য একদিন আবদার করে মেয়ে। কিন্তু আমরা কেউ রাজি হইনি। করোনা-লকডাউনের মধ্যে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই বলেছিলাম। কিন্তু পরে ওর জেদ আর আগ্রহের কারণে রাজি হই আমরা। বাইরে আমাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। তাই ঘরের সামনের উঠানের জায়গায় রাত দিন খেটে নার্সারি গড়ে তোলে। লোক নেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আখি নিজে নিজে জমি প্রস্তুত করেছে। মাঝে মাঝে আমিও সহযোগিতা করছি। উঠানের উপরে সতেজ চারাগুলো দেখে এখন খুব ভালো লাগে। 

বৈটপুর উদ্দীপন বদর শামসু বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, সদ্য এসএসসি পাস করা একটি মেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়কে নষ্ট না করে নার্সারি গড়ে তুলেছে, বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। আমি আখির নার্সারি দেখেছি, অনেক সাজানো গোছানো। অল্প জায়গা হলেও অনেক ভালো করেছে সে। আখির মতো অন্য শিক্ষার্থীদেরও অবসর সময়কে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। 

বাগেরহাট জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আজগর আলী বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আখি যে নার্সারি গড়ে তুলেছেন, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমি আখির নার্সারি পরিদর্শন করবো। আখি ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় সরকারি প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দেন তিনি।