পজিটিভ বাংলাদেশ

গোপালগঞ্জে বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা 

কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের করোনা আক্রান্ত রোগী সালমা। হঠাৎ করেই দেখা দেয় তার শ্বাসকষ্ঠ। অক্সিজেন সেবা পেতে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ দাঁড়িয়া ফোন দেন ‘টিম লাইফ সাপোর্ট’কে। তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সেখানে ছুটে যান সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। অক্সিজেন সেবা পেয়ে সুস্থ হন সালমা।

সামলার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ দাঁড়িয়া বলেন, আমার মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছিল। হঠাৎ করেই তার তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে টিম লাইফ সাপোর্টকে ফোন দিতেই দ্রুত তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে আমার মেয়েকে দেন এবং তার শ্বাসকষ্ট দূর হয়। যেখানে করোনা রোগীর কাছে মানুষ যেতে ভয় পায়, সেখানে টিম লাইফ সাপোর্টের সদস্যরা করোনা রোগীর কাছে গিয়ে যেভাবে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

এসব স্বেচ্ছাসেবীদের মোটরসাইকেলে করে ছুটেচলা আনন্দের জন্য নয়। কোভিড আক্রান্ত বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের কথা শুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অক্সিজেন সেবা দিতে ছুটে চলা তাদের। 

সম্প্রতি অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় গোপালগঞ্জে কোভিড আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে গোপালগঞ্জের উদীচি, প্রিয় গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতি অক্সিজেন ব্যাংক, কোটালীপাড়া উপজেলার জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সহযোগী সংগঠন টিম লাইফ সাপোর্ট ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নবধারা অক্সিজেন সেবাসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এসব প্রান্তিক ও অসহায়দের অক্সিজেন সেবা দিতে ২৪ ঘন্টা জেলার ৫ উপজেলায় ছুটে চলছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। 

এসব সংগঠনের রয়েছে অন্তত ১০টি হেল্পলাইন নম্বর। শুধু ফোন নয়, অনলাইন বা ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পেলেও সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব সংগঠন শতাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডারে মাধ্যমে কয়েকটি উপজেলার পাঁচ শতাধিক কারোনা ও শ্বাসকষ্ট রোগীকে সেবা দিয়েছেন। এছাড়া, উদীচী ৫টি ও প্রিয় গোপালগঞ্জ ১টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যেমে অক্সিজেন তৈরি করে সরাসরি সেবা দিচ্ছে। 

কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের তারাশী গ্রামের রোগী মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫), গৃহবধূ সালমা (৩০) বলেন, আমাদের শ্বাসকষ্ঠ দেখা দিলে স্বেচ্ছাসেবীদের ফোন দিতেই তারা বাড়িতে ছুটে আসে। অক্সিজেন দেওয়ার পর আমরা সুস্থ আছি।

কালিগঞ্জ গ্রামের ধেনু হালদার (৭৫), ভূয়ারপাড় গ্রামের স্বপ্না (২২) বলেন, আমাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। কোথায় গেলে অক্সিজেন পাবেন এমন চিন্তায় দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসময় তারা স্বেচ্ছাসেবীদের হেল্পলাইনে ফোন করলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে এসে সেবা দেন। আমরা এখন সুস্থ। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের ভালো করে।

স্বেচ্ছাসেবী মেহেদী হাসান বলেন, আমরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও বাগেরহাটের চিতলমারীতে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। ফোন পেলেই ছুটে যাচ্ছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সহযোগী সংগঠন “টিম লাইফ সাপোর্ট অক্সিজেন ব্যাংক” কোটালীপাড়ার পরিচালক সুশান্ত মন্ডল বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে টিম লাইফ সাপোর্ট। আমাদের কাছে ২৪টি সিলিন্ডার রয়েছে। ১২টি টিমে ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে টিম লাইফ সাপোর্ট অক্সিজেন ব্যাংক কোটালীপাড়ায়। দিন দিন এই উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুষ্ঠভাবে আমাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য আরও অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। তাছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রী দরকার।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “প্রিয় গোপালগঞ্জ”-এর পরিচালক সুব্রত সাহা বাপী বলেন, প্রিয় গোপালগঞ্জ সাধারণ মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। ৩৮ সিলিন্ডারের মাধ্যমে এপযর্ন্ত ২৫০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। কারোনাকালীন সময়ে আমাদের এ সেবা অব্যাহত থাকবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “মধুমতি অক্সিজেন ব্যাংক”-এর উদ্যোক্তা ডিএমপি এডিসি জামাল আল নাসের শামিল বলেন, কারোনাকালীন সময়ে যাতে কেউ অক্সিজেনের অভাবে না পড়েন, সেজন্য আমি ফেসবুকে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। এ পোস্টের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে ২৪টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে দেড় শতাধিক রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এ কাজে সমাজের সবাই এগিয়ে আসবেন, এমনটিই প্রত্যাশা আমার।

এসব সংগঠনকে সাধুবাদ জানিয়ে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন সংগঠন অনুদান বা নিজ খরচে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে যাদের অক্সিজেন দরকার তাদেরকে বাড়িতে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে যাদের অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালে আসতে হতো, তাদের আসতে হচ্ছে না। নিঃসন্দেহে এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো বিপদের মুহূর্তে মানুষের পাঁশে দাঁড়ানো মানুষের জন্য প্রকৃত একটি শিক্ষা। মানবিকতার চর্চার জায়গাটা পূর্ণ হচ্ছে। প্রথম থেকেই আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। আগামীতের তাদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমাদের পক্ষ থেকে অব্যাহত থাকবে।