পজিটিভ বাংলাদেশ

গিনেস রেকর্ডসে স্বপ্ন তার

বকুল সিদ্দিকী। পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিল্লা গ্রামে তার বাড়ি।

তার বাবা সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক। বকুল তাদের ৬ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বকুল সিদ্দিকী একজন পল্লী চিকিৎস হলেও সাঁতারে পারদর্শী। তার স্বপ্ন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠানো। আর সে স্বপ্ন পূরণে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

বকুল সিদ্দিকী মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) নদীপথে প্রায় ৭ ঘন্টা সাঁতার কেটে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁচ্ছেন। ভোর ৫টায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব ব্রিজের পাশ থেকে সাতাঁর শুরু করে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের মনিপুরা খেয়াঘাটে দুপুর ১২টায় এসে পৌঁচ্ছেন।

একটানা ৭ ঘণ্টা সাঁতারে প্রায় ৪২ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেওয়া এই পল্লী চিকিৎসকের স্বপ্ন আরও অনেক বড়। তিনি সাঁতার কাটার রেকর্ড ভেঙে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম লেখাতে চান। মেঘনা নদীর শাখা নদীর তীরবর্তী তার গ্রাম। এ গ্রামে বেড়ে ওঠা ছোটবেলা থেকেই কমবেশি সাঁতার কাটেন তিনি।

তবে বকুলের সাঁতারু হওয়ার নেশা ১৯৯৫ সাল থেকে। ওই সময়ে তিনি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত সাঁতার কাটেন। সমদ্রপথে ওই সাঁতার ছিল প্রায় ১৮ কিলোমিটারের। সেই থেকে তিনি নিয়মিত সাঁতারে যুক্ত হন। সাঁতার কাটতে গিয়ে বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাকে।

গত ২০২০ সালে ২৩ আগস্ট স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশের আয়োজনে মেঘনা নদীতে এক সাঁতার প্রতিযোগিতা অংশ নেন বকুল। তখন গন্তব্য ছিল রায়পুরা উপজেলার চর আড়ালিয়া থেকে নরসিংদী শহরের ইউএমসি জুট মিল পর্যন্ত ৪ ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। ওই গন্তব্য পথ সাঁতরে পাড়ি দিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১ লাখ টাকা পুরস্কারও পান তিনি।

বকুল সিদ্দিকী গতকাল নদীপথে টানা সাঁতারে নামছেন, বিষয়টি অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনে যান। ভোরবেলা কিশোরগঞ্জের ভৈরব ব্রিজের কাছে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্পিডবোট, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে তার সাথে ছিলেন।এছাড়া মনিপুরা খেয়াঘাটে সাঁতারু বকুলকে দেখতে খোদাদিল্লা গ্রামসহ এর আশেপাশের এলাকা থেকে নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে হাজারো জনতা ভিড় জমায়।

দীর্ঘ এই নদীপথ পাড়ি দিয়ে দুপুর ১২টায় যখন মনিপুরা ঘাটে এসে পৌঁছালেন, সেখানে এই সাঁতারুকে স্বাগত জানাতে অপক্ষা করছিলেন কয়েকশ মানুষ। খেয়াঘাট এলাকায় তিনি পৌঁছাতেই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসময় উৎসুক এলাকাবাসী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানায়।

বকুল সিদ্দিকী বলেন, সাঁতার কাটার পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে গিনেস বুকে নাম লেখাবো, এটা আমার লালিত স্বপ্ন। এ জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি ঘোষণা দিয়ে নদীপথে সাঁতার কাটি। ইতোমধ্যে আমি বিভিন্ন স্থানে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছি। আগামী দিনে নরসিংদী থেকে নদীপথে সাঁতার কেটে রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

বকুল সিদ্দিকীর ছোট ভাই ফাহিম সিদ্দিকী বলেন, আমার বড় ভাই বকুল ছোট সময় থেকে সখের বশে মেঘনা নদীতে সাঁতার কেটে আসছেন। বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি বিজয়ীও হয়েছেন। আমি সবার কাছে ভাইয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি, তার যে স্বপ্ন গিনেস বুকে নাম লেখানো, তা যেন বাস্তবায়িত হয়।

আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিপু বলেন, বকুল সিদ্দিকীকে নিয়ে এলাকার সবাই গর্ব করেন। তার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠানোর স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি।

রায়পুরা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মোমেন বলেন, বকুল বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তাকে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই।