সৃজনশীল নানা উদ্যোগের কারণে গুরুদাসপুর উপজেলার নাম অনেকেরই জানা। সে অগ্রযাত্রায় এবার যুক্ত হলো ‘এক অন্যরকম আশ্রয়ণ প্রকল্পের গল্প’। গুরুদাসপুরে দুই ধাপে জমির সঙ্গে স্থায়ী পাকা ঘরের মালিকানা পেয়েছে ১৮৫টি পরিবার।
এই অন্যরকম আশ্রয়ণ প্রকল্পের গল্পটি শুরু হলো মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের দ্বিতীয় ধাপে ঘর পাওয়া ২১টি পরিবার নিয়ে। প্রকল্পে থাকা নারীদের কর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু, করোনা টিকা ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, স্থাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী, প্রতিটি পরিবারকে একটি করে পেয়ারা গাছ ও লেবু গাছ প্রদান, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা, শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য শিশু পার্ক, পুরুষের জন্য ড্রাইভিং, আশ্রয়ণে থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান, স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য চিকিৎসালয়সহ প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করার সব ব্যবস্থার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগের উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র মো. শাহনেওয়াজ আলী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলাল শেখ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু রাসেল, মশিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা জানায়, তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার এই ঘর। ঘরের সাথে জমি। এছাড়াও পানি, বিদ্যুৎসহ সার্বিক এতসব সুবিধা সে পাবে, তা কখনো কল্পনাও করেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে আত্মনির্ভশীল করার একটি সুযোগ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।
কথা হয় কয়েকজন শিশুদের সঙ্গে। তারা জানায়, নিজেদের বাড়িতেই পার্ক। এর চেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাকি সময় দোলনা ও রাইডারেই সময় কেটে যায় তাদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন বলেন, শুধু ঘর করে দিয়েই শেষ হয়নি আশ্রিতদের গল্প। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ২১টি পরিবারের প্রতিটি নারীকে এক মাসের ট্রেনিং করানো হচ্ছে ব্লক বাটিক, ক্রিস্ট্রাল,কাঁথা ও সেলাইয়ের ওপর। পুরুষদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশু পার্ক। এছাড়াও খাদ্য সহায়তা, করোনার টিকা ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, চিকিৎসা সেবার জন্য চিকিৎসালয়, দুটি করে গাছ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের প্রতিটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে জন্য কয়েকটি রাইড প্রদান করা হয়েছে। যারা উপকোরভোগী রয়েছে, তাদের জন্য গাছ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছি। আমরা চাচ্ছি, যারা এখানে বসবাস করবে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন এরা স্বাবলম্বী হবে ভালো পরিবেশে থাকবে, আমরা সেই ব্যবস্থাটি সুনিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আমরা চাই, সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্নের বাস্তবায়ন, সেটি এমনভাবে আমরা করবো, যেন এখানে বাস করেই তারা শহরের ন্যায় অনেক সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে।