পজিটিভ বাংলাদেশ

প্রতিদিন ৩০০ ক্ষুধার্ত খাচ্ছেন মেহমানখানায়

নরসিংদীতে প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি অসহায় ক্ষুধার্ত খাচ্ছেন মেহমানখানায়। আর এ ক্ষুধার্ত মানুষকে একবেলা খাবার তুলে দিচ্ছে ‌‌‘আমরা কজন’ নামে একটি সেবামূলক সংগঠন।

গত ৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলছে বিনামূল্যে একবেলা খাবার প্রদানের কার্যক্রম। দিন যতই যাচ্ছে মেহমানখানায় প্রতিদিন বাড়ছে হতদরিদ্র ক্ষুধার্তের সংখ্যাও। 

শুক্রবার (২০ আগষ্ট) ছিল ‘মেহমানখানা’ ১৮তম দিন। এখানে কথা হয় নরসিংদীতে বসবাসরত বাগেরহাটের আয়েশা বেগমের সাথে। তিনি জানান, তার এক ছেলে ও অন্ধ স্বামীকে নিয়ে থাকেন শহরের ভেলানগরে। ছেলে বিভিন্ন স্থানে হকারি করে। আর আয়েশা তার অন্ধ স্বামীকে নিয়ে শহরে ভিক্ষা করেন। এ থেকে যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই কোনো রকম চলে তাদের সংসার। কিন্তু করোনাকালীন মানুষের আয়-রোজগার কম থাকায় তারা আগের মতো তেমন ভিক্ষাও পাচ্ছেন না। তাই কোনো সময় খেয়ে আবার কোনো সময় না খেয়ে কাটে তাদের দিন।

মহামারির এই সময়ে মেহমানখানায় প্রতিদিন দুপুরে পেটপুরে খাবার খেতে পারায় খুশি তারা। শুধু আয়েশা নয়, তার মতো এখানে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩০০ অসহায় মানুষ চেয়ার-টেবিলে বসে আয়েশ করে খাবার খেয়ে হাসিমুখে ফিরে যান।

ক্ষুর্ধাত মানুষকে খাবারে সহযোগিতা করছেন আমরা ক’জন নামে সেবামূলক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের মধ্য থেকে চার-পাঁচজন প্রতিদিন মেজবান হোটেলের সামনে সকাল থেকে রান্নাবান্নার কাজ করেন।

বেলা যখন ঠিক দুপুর ২টা, তখন খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না হলেও প্রতি শুক্রবারে খাদ্যের তালিকায় থাকে তেহারি, সঙ্গে মিনারেল ওয়াটার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১টা বাজতেই যথারীতি আসছেন অনাহারীরা। যোহরের নামাজের পরপরই শুরু হয় খাওয়া, চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।

মেজবান রেস্টুরেন্টের সামনের সিঁড়িতে চায়ের চামচ দিয়ে ছোট শিশু ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ১২/১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী। এসময় কথা হয় তার সাথে। সে জানায়, বোন লিজা আক্তারের হাত ধরে দুপুরে খাবার খেতে মেহমানখানায় এসেছে ছোট ভাই ফয়সাল (৫)। ফয়সাল নিজের হাতে খেতে পারবে না, তাই বাসা থেকে নিয়ে আসা চামচ দিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন লিজা। প্রায় প্রতিদিনই দুপুরে ভাইকে সাথে নিয়ে এখানে আসে সে।

প্রতিদিন খাবার খেতে আসেন ময়মনসিংহ এর হেলেনা বেগম। তিনি বলেন, এখানের খাউন দাউন খুবঅই সুন্দর। মেঘ বিষ্টিতেও আঙ্গর কোনো অসুবিধা অয়না। উপরে ত্রিপলের পর আবার র‌‌ঙ-বেরঙের কাপড় দিয়ে ছামিয়ানা টানানো। চেয়ার টেবিলে বইয়া খুব আরাম কইরা মজার খাওন খাইয়া আঙ্গর অনেক শান্তি লাগে।

আয়োজকদের একজন নরসিংদী মডেল কলেজের শিক্ষক মহসীন শিকদার। তিনি বলেন, দিন যতই গড়াচ্ছে মেহমানখানায় অনাহারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি হচ্ছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন নই, বরং খুশি। তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে এজন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধান উদ্যোক্তা নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল পারভেজ বলেন, হঠাৎ করেই মেহমানখানার এই পরিকল্পনা মাথা আসে। আর পরদিন থেকেই ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আয়োজন করি এই মেহমানখানা। বর্তমানে মেহমানখানায় আসা অনাহারী মানুষের সাথে আমরা আষ্টেপৃষ্টে বাধা পড়ে আছি। এক ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ আমরা।

এদিকে বিভিন্ন সময় মেহমানখানায় উপস্থিত থেকে এমহৎ কর্মের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা, নরসিংদী মডেল কলেজের অধ্য মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ঠিকাদার ফারুক সরকার, রোটারিয়ান রাসেল বিন হাসনাত, মোতাহার হোসেন মৃধা, মোকারম হোসেন ভুঞা,শফিকুল ইসলাম স্বপন, প্রফেসর এ এইচ মিলন, অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম মীরু, অধ্যাপক সজীব মিয়া, নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রিজের পরিচালক শহীদুল হক পলাশ, প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক নুরুদ্দিন বাদশা ও বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।