পজিটিভ বাংলাদেশ

লাখো মানুষের ভোগান্তি দূর করলেন একাই

ড্রেনের অভাবে অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়কটি। আশেপাশের সাত-আটটি গার্মেন্টসের শ্রমিক, এলাকাবাসীসহ কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। হাঁটু পানি জমে থাকায় চলাচল দূরহ হয়ে পড়ে। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও প্রতিকার পাননি স্থানীয়রা। 

মাস দুই আগেও সাভারের আশুলিয়ায় ইউনিক বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূইয়া পাড়া এতিমখানা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সড়কটিতে হাঁটু পানি জমে ছিল। চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। অবশেষে আলম ভূইয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজেই সংস্কারের উদ্যোগ নেন। ব্যক্তিগত আট লাখ টাকা খরচ করে গত এক মাস ধরে সড়কটি সংস্কার করেন। ইট ও বালি ফেলে উঁচু করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করেন। পানি নিষ্কাশনের জন্য সংস্কার করেন ড্রেনও। আলম ভূইয়ার এমন মহতি কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সড়কে চলাচলকারী ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‌‌‘প্রায় ৫-৭ বছর ধইরা রাস্তাটায় ভাঙা, গাতা (গর্ত) ছিল। অল্প বৃষ্টি হইলেই পানি জইমা জলাবদ্ধতা হইতো। জলাবদ্ধতার কারণে এই রাস্তাটা দিয়া চলাচল করা যাইতো না। আমাদের এখানে অনেক গার্মেন্টস। লাখ লাখ শ্রমিকরাও ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারতো না।’ 

দ্বীন ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘অনেক দিনের জলাবদ্ধতার কারণে আমরা এলাকাবাসী অনেক ভোগান্তিতে ছিলাম। আশপাশের অনেক বাড়িঘরে ভাড়াটিয়ারা আসতো না, খালি থাকতো। এখানকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাওয়া হইছিল। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস দিতে পারে নাই। তারপরে আমাদের এলাকার আলম ভূইয়া রাস্তাটা সংস্কারের উদ্যোগ নেন। সবাইকে ডাইকা নিয়া বইসা নিজের টাকায় রাস্তাটা সংস্কার করেন। এখন রাস্তাটা দিয়া সবাই ভালোভাবে চলাচল করতাছে। বাড়িঘরে ভাড়াটিয়ারা আসতেছে।’ 

রিকশাচালক মোবারক হোসেন বলেন, অনেক দিন যাবৎ রাস্তাটা ভাঙা আছিল। যাত্রী নিয়াতো দূরের কথা খালি রিকশা নিয়া যাওয়া যাইতো না। একেতো জাগায় জাগায় গর্ত। তার উপর হাঁটু সমান পানিতে তলায় থাকতো। গর্তে পইরা রিকশা ভাইঙ্গা যাইতো। এখন রাস্তাটায় ইটের টুকরা ফেইলা উঁচা করণে রিকশা নিয়া যাওন যায়। আগের চাইতে অনেক আরামে রিকশা চালাইতে পারি।

সড়কটি সংস্কারকারী আলম ভূইয়া বলেন, ‘এমন অবস্থা হইছিল এই রাস্তা দিয়া ট্রাক যাওয়ার সাহস পাইতো না। এই পরিমাণ গর্ত আর পানি হইছিল। পরে আমি জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ভাইস চেয়ারম্যান ওনাদের সাথে যোগাযোগ করছি। ওনারা আমারে কোনো আশানুরূপ আশ্বাস দেয় নাই। অনেক দৌড়ঝাঁপ কইরাও কোনো ফল পাই নাই। পরে আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়া রাস্তাটা ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিছি। এতে আমার প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার ট্যাকা খরচ হইছে। যদিও এখনো শ্যাষ হয় নাই। ৮ লাখ ট্যাকার মতো খরচ হইবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখন মোটামুটি মানুষ ও গাড়ি চলার মতো উপযোগী হইছে। ইপিজেড ও আর ৭-৮টা গার্মেন্টেসের সমস্ত লোক এই রাস্তাটা দিয়া চলাফেরা করে। এতদিন আমরা খুব দুর্ভোগে ছিলাম। এখন কোনোরকম বাঁচতে পারতাছি। এখন সরকারিভাবে যদি আরও একটু ভালো করে কিছু করে দেয়, তাহলে আমরা খুব উপকৃত হইতাম। বিশেষ করে আমাদের এলাকাবাসীর জন্য একটা ড্রেনের খুবই প্রয়োজন। আমি ড্রেনটাও কোনোরকমে সংস্কার করতেছি।’