পজিটিভ বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে সুপারিতে ৬০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

সয়াল্যান্ডের জেলা লক্ষ্মীপুর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই মুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় চলতি বছর এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি বছর সুপারি উৎপাদন হবে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা।

এখানকার উৎপাদিত সুপারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ হওয়ার পাশাপাশি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও। করোনার এই ক্রান্তিকালে সুপারির বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে বাগান মালিকদের মুখে। এ অঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িতে রয়েছে সুপারি গাছ। এছাড়াও বিশাল-বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বাগান। সুপারির উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা গেলে আগামীতে ফলন আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগান মালিকরা বাজারে বিক্রির জন্য সুপারি নিয়ে আসছেন। তাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন ব্যাপারীরা। তারা জানান, এখানে উৎপাদিত সুপারি ভালো মানের ও সুস্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাংগুনিয়া, কুমিল্লা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ বছর অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও হয়েছে ভালো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জের হাট-বাজারেও চলতি মৌসুমে সুপারি বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অর্থকরী ফসল ও সৌন্দর্যের জন্য অনেক বাড়ির আশপাশে, প্রবেশ পথে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে সারি সারি সুপারি গাছ রয়েছে।  এটি লক্ষ্মীপুরের অন্যতম লাভজনক ফসল।

স্থানীয়রা বলেন, ৮০টা সুপারিতে ১ পোন, যা মৌসুমের শুরুতে ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন দাম ধীরে ধীরে কমছে।

স্থানীয় চররুহিতা গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, আলম ব্যাপারী ও আবু ব্যাপারী জানান, তাজা সুপারির চাহিদা থাকায় দাম বেশি। লক্ষ্মীপুরের সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে তারা বিক্রি করেন।

বাগান মালিক আবু তাহের হাওলাদার, মাহফুজ মাস্টার ও দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুপারি উৎপাদনে খরচ কম। একবার গাছ লাগালেই হলো। গাছের তেমন পরিচর্যা করতে হয় না। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ। চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যাশিত দামও পাওয়ায় যায়। এজন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপারি চাষ বেড়েছে।

জানা যায়, সঠিকভাবে চারা লাগালে ও যত্ন নিলে ছয় থেকে সাত বছরে সুপারির ফলন আসতে শুরু করে। তবে বেশি ফলন ধরে ১০ থেকে ১২ বছরের পর থেকে। সুপারি গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একটি গাছে বছরে তিন থেকে পাঁচটি ছড়া আসে। গাছে ফুল আসার পর ৯ থেকে ১০ মাস লেগে যায় ফলন পাকতে।  প্রতি ছড়াতে ৫০ থেকে ১৫০টি পর্যন্ত সুপারি থাকে। আগস্ট থেকে সুপারি পাকতে শুরু করে। মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ চলে। এতে হেক্টর প্রতি ১ থেকে ৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুকনো সুপারি পাওয়া যায়।

এ অঞ্চলের সুপারির জাত উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা গেলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এবছর জেলার ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারির উৎপাদন হবে ১৭ হাজার মেট্রিক টন।  এর বাজার মূল্য প্রায় ৫০০-৬০০ কোটি টাকা।’