পজিটিভ বাংলাদেশ

খোঁজ মিললো ৩৪ বছর বয়সী গরুর  

একটি গরুর গড় বয়স কতো? হবে ১২ থেকে ১৫। এর চেয়ে বেশি তো নয় নিশ্চয়ই। তবে, যদি শোনেন কোনো গরুর বয়স ৩৪। বিশ্বাস হবে কি! এবার এমনই একটি অবিশ্বাস্য গরুর খোঁজ মিলেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। শহরের সাহেব পাড়ার বিধবা নাজ ইয়াসমিন দীর্ঘদিন ধরে গরুটি পালন করছেন।  

নাজ ইয়াসমিনের প্রয়াত স্বামী আলীম উদ্দিন ১৯৮৮ সালে স্থানীয় হাট থেকে গরুটি কিনেছিলেন। তখন এর বয়স ছিল মাত্র একবছর। মূলত নাজ ইয়াসমিন দম্পতির ভূমিষ্ট হওয়া প্রথম কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই গরুটি কেনা হয়েছিল। 

কালো বর্ণের দেশীয় জাতের এই গরুটির নাম ‘কালী’। প্রতিবেশীদের কাছে কালী যেন এক ভালোবাসার প্রতীক। এর আদর-যত্নের অভাব হয় না। প্রতিদিনই স্থানীয়দের কেউ না কেউ ওর জন্য খাবার এনে দেন। কেউ কালীকে খড় খেতে দেন, আবার কাঁচা ঘাসও খাওয়ান। 

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজ হাতে লালন-পালন করা বৃদ্ধা নাজ ইয়াসমিনের গাভীটি এখন পর্যন্ত ২৫ টিরও বেশি বাছুর দিয়েছে। বেশকিছু বাছুর পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর তিনি ভালো দামে বিক্রি করেছেন। গরু বিক্রির টাকায় বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন৷ এখন তিনি তার দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। মা-ছেলে মিলে কালীর খেয়াল রাখছেন। 

এত বছরে বৃদ্ধা তার আদরের এই গরুকে কখনো দড়ি দিয়ে বেধে রাখেননি। সবসময় খোলামেলা পরিবেশে রেখেছেন। ছেড়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন সকালে কালী বাড়ি থেকে বের হয়। শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে ঠিক সন্ধ্যায় নিজে থেকে ইয়াসমিনের দুয়ারে হাজির হয়।

সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কালীকে নাজ ইয়াসমিন বেশিরভাগ সময় নিজ হাতে খেতে দেন। অসুখ-বিসুখ দিশেহারা হয়ে পড়েন। কালীর সুস্থতার জন্য মানত পর্যন্ত করেন।  তাইতো স্বামীর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও পরম যত্নে গরুটিকে আগলে রেখেছেন।

সৈয়দপুরে বয়স্ক গরু হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিরল গরুকে অনেকে বিভিন্ন সময় কিনতে চেয়েছিলেন। কসাইরাও বেশ কয়েকবার দেখে গিয়েছেন। কিন্তু বৃদ্ধা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার আদরের কালীকে বিক্রি করবেন না। জবাইও করতে দেবেন না। তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কালীকে নিজের কাছে রাখতে চান।

নাজ ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার চার ছেলেমেয়ে৷ ১৯৮৮ সালে আমার বড় মেয়ের জন্ম হয়। সে বছরেই আমার স্বামী গরুটি কিনে বাড়িতে আনেন। তখন থেকেই এই গরুটি আদরযত্ন দিয়ে পালন করে আসছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কালীকে মহল্লার লোকজন খুব ভালোবাসে। সবাই ওর খুব খেয়াল রাখে। প্রতিদিনই বাচ্চারা কালীর জন্য খাবার নিয়ে আসে। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার কিছুই ছিল না। কালীই আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। তাইতো লাখ টাকা দাম উঠলেও কালীকে কখনো হাতছাড়া করবো না।’

কামারপুকুড় ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নরত এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. রাজ ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই গরুটিকে দেখছি। এটি আমার জন্মের আগে থেকেই এ এলাকায় আছে। গরুটি সারাদিন গলায় দড়ি ছাড়া মাঠে, বাজারে বেড়ায়।’

সৈয়দপুর ডেইরি ফার্মার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরান ইমু বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে গরুটি দেখে আসছি। এলাকাবাসীর কাছ থেকেও গরুটি সম্পর্কে জেনেছি।  এর বর্তমান বয়স প্রায় ৩৪ এর কাছাকাছি। যা একটি বিরল ঘটনা। আমরা চাই এই গরুটি রেকর্ডের আওতাভুক্ত হোক এবং দেশের সবচেয়ে বয়স্ক গরু হিসেবে স্বীকৃতি পাক।’

নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী বলেন, ‘সাধারণত ১৮ হতে ২০ বছর একটি গরু বাঁচতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে এর বেশিও হতে পারে। আমরা গরুটির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’ 

এ বিষয়ে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক ইসলাম বলেন, ‘আসলে একটি গরু দুধ ও বাচ্চা দেওয়া বন্ধ এবং মাংস বৃদ্ধি কমে আসলেই জবাই করা হয়। ১৫/২০ বছরের উপরে গরুকে বাঁচতে দেওয়া হয় না। দেশীয় হিলি এড়িয়া জাতের গরু অন্য গরুর চেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকে। হয়তো এটি এ জাতের গরু হতে পারে।’