পজিটিভ বাংলাদেশ

হলুদ গালিচায় প্রকৃতি মেলেছে পাখা  

দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। দু’চোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। আঁকাবাঁকা রাস্তার দু’পাশে প্রকৃতি যেন সেজেছে আপন মহিমায়। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের গন্ধ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। 

বলছিলাম সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার কাশেম বিলের কথা। ঋতু বৈচিত্র্যের এই বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্যে ভরে ওঠে এই কাশেম বিল। কখনো রূপালী জলে ভরে যায় বিল, কখনো বা সোনালী ধানের শীষে লাগে বাতাশের দোল। বর্ষায় এ বিল থাকে পানিতে পূর্ণ। বর্ষা শেষে পানি নেমে যায়, ঠিক তখনই কৃষকেরা বিস্তৃত মাঠে কার্তিক মাসে বপন করেন সরিষা। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফুল আসে, থাকে পৌষ মাস পর্যন্ত। 

বর্তমানে এই কাশেম বিল সরিষা ফুলে পরিপূর্ণ। হলুদের ছোঁয়া যেন মন কেড়ে নেয়। ক্ষেতের দৃষ্টিনন্দন এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন এখানে। যেন একটি বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার বড় পাঙ্গাশি, মোহনপুর, শ্রীপাঙ্গাশি, গয়হট্টা, কোয়ালিবেড মৌজাজুড়ে কাশেম বিল ও আশেপাশে হলুদ গালিচা বিছিয়ে যেন অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে পল্লীর প্রকৃতি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বাড়ছে প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। প্রজাপতির দল ছুটে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মৌমাছির ভনভনানিতে মুখর সরিষার বিস্তৃত মাঠ। ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হাজারো মৌমাছির দল। এদিকে সরিষার ভালো ফলনে কৃষকদের মুখেও সোনা রাঙা হাসি।

বড় পাঙ্গাশি ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন তার নাতিকে নিয়ে মাঠে কাজ করে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, সরিষার আবাদ বাপ-দাদার আমল থেকে করে আসছে। আমরাও করি। এবার ৩ বিঘা জমিতে সরিষা লাগানো হয়েছে। ভালো ফুল এসেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিকেলে মানুষ ঘুরতে আসেন। তবে আগে তেমন মানুষ আসতো না কিন্তু দুই বছর ধরে বেশি আসে।

এই কাশেম বিলের মাঝে বটতলায় ভাসমান দোকানদার হাসেম চাচা। সাদা মনের মানুষ তিনি, তার দোকানের পাশে সবসময় ভিড় করে বিভিন্ন পাখি। এদের তিনি খাবার দেন। এতেই পাখিরা একপ্রকার পোষা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিকেল হলে মানুষজন ঘুরতে আসে। এসে দোকানে বসে, কিছু কিনে খায়, ছবি তুলে আবার চলে যায়। কৃষকেরাও কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে এখানে এসে বসে থাকে।

পল্লী চিকিৎসক খন্দকার নুরনবী বলেন, আমি এই রাস্তা দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করি। অনেক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন, ছবি তোলেন। বিশেষ করে শুক্রবারে দর্শনার্থীরা স্বপরিবারে আসেন। সরিষা ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তারা ছবি তোলেন। এতে কিছু সরিষা নষ্টও হয়ে যায়। তারপরও কোনো কৃষক তাদের বাধা দেন না। এখানকার কৃষকেরা বরং আনন্দ পান এবং উপভোগ করে থাকেন।