পজিটিভ বাংলাদেশ

আগর গাছের পাতায় চা উৎপাদন

শেখ মো. আব্দুল্লাহ মোশাহিদ। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালীনগরের পাহাড়ি এলাকায় দুর্লভ এবং দামি আগর গাছের বাগান করেছেন। ২০০৭ সালে প্রায় ৭ হাজার আগর গাছের চারা রোপণ করেছেন ওই বাগানে। পরবর্তী সময়ে রোপণ করেন আরও ৩ হাজার চারা। বর্তমানে তার বাগানে বড় গাছ রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এসব গাছের বীজ থেকে আরও ২০ হাজার চারা গাছ হয়েছে।

বড় গাছগুলো তিনি বিক্রি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আর ছোট গাছের পাতা থেকে চা পাতা উৎপাদন করছেন। চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উপকরণসামগ্রী রয়েছে। বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করে চা পাতা উৎপাদন করা হচ্ছে। আগরউড চা (আগর চা পাতা) বিক্রি হচ্ছে। এতে তিনি বেশ লাভবান।

জানা যায়, আগর গাছের নির্যাস থেকেই তৈরি করা হয় আতর বা সুগন্ধি। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক দুই উপায়েই আগর থেকে সুগন্ধিজাতীয় আতর বা পারফিউম উৎপাদন করা হয়। মোঘল আমলে বৃহত্তর সিলেটে আগর শিল্পের সুনাম ছিল বিশ্বজুড়ে। সবাই আগরগাছকে বহু মূল্য আগর তেলের জন্য চেনেন, যা থেকে সুগন্ধি আতর তৈরি করা হয়। উন্নত মানের এক লিটার আগর তেল ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

গাছ থেকে আগর সংগ্রহ করে নেওয়ার পর এর কাঠ সুগন্ধি ধূপ হিসেবে জ্বালানো হয়ে থাকে। এই গাছ শুধু সুগন্ধি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। পাতা থেকে শুরু করে গাছের কাঠ সবকিছু ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। এত দিন পাতাকে তেমন একটা কাজে ব্যবহার করা হতো না। অবশেষে পাতা দিয়ে তৈরি করা হলো ঔষধি গুণসম্পন্ন চা।

এবিষয়ে রোটারিয়ান শেখ মো. আব্দুল্লাহ মোশাহিদ বলেন, আমরা সাধারণত আগরগাছকে সুগন্ধি তৈরির গাছ হিসেবেই জানি, কিন্তু পাতা থেকে শুরু করে শেকড় পর্যন্ত পুরোটাই ঔষধি গুণসম্পন্ন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এই গুণের কথা না জানায় গাছের পাতা নষ্ট করতেন। পাতাগুলো যাতে কাজে লাগানো যায়, এজন্য চা তৈরি করি। 

আগর গাছের পাতার চা দেখতে হাতে তৈরি চা পাতার মতো। এগুলোও হাতে তৈরি করা হয়েছে। পাতা দিয়ে তৈরি চায়ের স্বাদ সাধারণ লিকার চায়ের মতো। তবে এতে প্রাকৃতিকভাবে আলাদা একটি সুগন্ধি রয়েছে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, কাশি, বাত এবং উচ্চ জ্বর থেকে মুক্তি পেতে, ব্যথা উপশম করতে রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক করতে, বমি বমিভাব কমাতে, হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে প্রাচীনকাল থেকে আগর পাতাকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। 

তিনি জানান, কালীনগরে পাহাড়ি প্রায় ৩০ বিঘা জমি রয়েছে। এ জমিতে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে মেসার্স তাহসিনা এগ্রো গার্ডেন অ্যান্ড রিসোর্ট।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তমিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে রোটারিয়ান আব্দুল্লাহ মোশাহিদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যারা অল্প খরচে অধিক আয়ের বিষয়ে ভাবছেন তাদের জন্য এটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। আমরা সারা জেলার চাষিদের মাঝে আগর চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।