পজিটিভ বাংলাদেশ

পলু পালনে লাখ লাখ টাকা আয় প্রান্তিক চাষিদের

আমির হোসেন। বাড়ি লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের তেলিপাড়া। ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ। খুব সুখেই আছেন। দৈনন্দিন আর্থিক কষ্ট তাকে ছোঁয় না। এই সুখের যাত্রা শুরু হয়েছে আজ থেকে ১৬ বছর আগে। এখন তিনি তার গ্রামের আদর্শ। রেশম বা পলু পালনে পাল্টে গেছে তার গ্রামের ১৩০টি পরিবারের চিত্র। যে কাজ তিনি একাই শুরু করেছিলের এক যুগের বেশি সময় আগে।

একটি ঘরের ৫ ফুট স্কয়ার ডালায় পলুর ডিম রাখতে হয়। সেখানে তুঁতের পাতা দিলেই পলুগুলো খেয়ে খেয়ে ২৫ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে রেশম গুটি হয়। এই গুটি বছরে চারবার উৎপাদন করা হয়। প্রতি ১০০ পলু পালনে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। বছরে কোনো খরচ ছাড়াই ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়।

আমির হোসেন ও আফরোজা বেগমের বাড়ির আশপাশ সবুজে ঘেরা। সবুজের সাথে বসবাস। বাড়ির সামনে-পেছনে তুঁতগাছ।ছোট, বড় এবং চারা গাছে ভরপুর। বাড়ির সামনে ৪ একর জায়গায় করেছেন কলার বাগান। এই বাগানে লাগিয়েছেন হাজার খানেক তুঁত গাজ। গাছগুলো বড় হয়েছে। কলাবাগানে বেড়া দিতে হয়নি। তার বাড়ি অনেকটাই বোটানিক্যাল বাগানের মতো।শীতল, স্নিগ্ধ নির্মল। যা যা করেছেন, তা শুধু পলু বা রেশম চাষকে সামনে রেখে।

আমির হোসেন জানান, ২০০৭ সালে নিজ উদ্যগে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে পলু পালন শুরু করেন। তারপর কয়েক বছর কেটে যায়। বছরে চারবার পলু থেকে রেশম গুটি উৎপাদন হয়। প্রতিবার ১০০ পলু পালনে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। পলুর খাদ্য শুধু তুঁত পাতা।

চাষিরা বলেন, প্রতি বিঘা তুঁত গাছ চাষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কোনো চাষি সড়কে তুঁত গাছ চাষ করলে গাছ প্রতি ৮ টাকা পান প্রতি বছর। এই চারাগুলোকে লোকাট চারা বলা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, আমির হোসেন এই গ্রামে প্রথম পলু পালন করেন। তাকে দেখে এখন ১৩০টি পরিবার পলু পালন করছেন।তারা সবাই এখন ভালো জীবনযাপন করছেন।

৫ থেকে ৭ শতক জমিতে ২০০ তুঁতের গাছ লাগানো যায়। এর জন্য পলু চাষি প্রথম বছর ৩,৫০০ টাকা, দ্বিতীয় বছর ১২৫০, তৃতীয় বছর ১২৫০ টাকা পেয়ে থাকেন। এরমধ্যে যে চাষি সরকারি বিভিন্ন সড়কে তুঁতের গাছ লাগানেন, তারা প্রথম বছর প্রতি গাছের জন্য ৮ টাকা, দ্বিতীয় বছর ৪ টাকা, তৃতীয় বছরও ৪ টাকা পাবেন। আর প্রতিজন চাষি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সহায়তা পাবেন। চাষিদের উৎপাদিত রেশম গুটি রেশম বোর্ড কিনে নিচ্ছে। বাইরের ক্রেতারাও কিনছে। এতে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে ওইসব অঞ্চলে। স্বাবলম্বী হচ্ছেন শত শত প্রান্তিক মানুষ।

রেশম বোর্ড জানায়, ৬০ জন করে একেকটি দল গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ১০০ পলুর ডিম পালতে ২০০টি তুঁত গাছের প্রয়োজন। মথের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ৬০ দিন। ১০০ ডিম থেকে ৪০ হাজার পলু হয়। প্রতি কেজি রেশম গুটি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বছরে চারবার পলু থেকে রেশম গুটি পাওয়া যায়। ১ মাস পলু পালন হয়। ২ মাস তুঁতের পাতা তৈরি করতে হয়। ১২ মাসকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। চৈত্র মাসে চৈতা, অগ্রহায়ণ মাসে অগ্রায়নী, ভাদ্র মাসে ভাদুরি, জৈষ্ঠ মাসে একটি। এই চারবার ক্রপ বা রেশম তৈরি হয়।

রেশম বোর্ড রংপুরের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব উল হক বলেন, আমরা চাষিদের সবরকম সহয়তা দিচ্ছি। বাঁশের ডালা, চন্দ্রা, ঘর করে দিচ্ছি। এই প্রকল্প করোনার কারণে থেমে ছিল। এখন কাকিনা, শৈলমারি, মহিষখোঁচা, হাতিবান্ধার চরাঞ্চলে কাজ করবো। ইতোমধ্যে নিজের চারটি পয়েন্ট তৈরি করেছি। যেখান থেকে পলু বিতরণ, আর্থিক সহায়তা, স্যানিটাইজেসন, সব বিতরণ করা হচ্ছে বিনামূল্যে। চাষির কাছ থেকে কোনো মূল্য নেওয়া হয় না। এবছর আমরা ৬০ জন চাষির কাছ থেকে ১০০০ কেজি রেশম কিনেছি। এগুলো রাজশাহী থেকে রকেটের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।