পজিটিভ বাংলাদেশ

বৃক্ষপ্রেমী শওকত মাস্টারের গল্প

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট এলাকার বাসিন্দা শওকত আলী। এলাকার সবাই তাকে শওকত মাস্টার বলেই চেনেন। তবে তিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির ওষুধি ও ফলজ বাগান করে। ১৬ বছর ধরে প্রকৃতির যত্ন করে এই মানুষটি অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও।  

১৯৩৯ সালে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের শীতল গ্রামে জন্ম নেন শওকত আলী। বিএ পাস করে স্থানীয় নাকাই হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি ঝোক ছিলো অনেক বেশি। বিভিন্ন মানুষের কাছে গাছের নাম শুনে গাছের সঙ্গে পরিচিত হতেন শওকত মাস্টার। একই সঙ্গে ওই গাছের উপকারিতা সম্পর্কেও জেনে নিতেন তিনি। 

শীতল গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই তাকে শওকত মাস্টার হিসাবেই চিনি । তিনি পৃথিবীর সব মানুষ ও জীবজন্তুদের নিয়ে চিন্তা করেন। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সংগ্রহ করেছেন বিরল প্রজাতির সব ওষুধি গাছ। সেই গাছের অংশ ও পাতা এখন চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আমরা তাকে নিয়ে খুবই গর্বিত। তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন।’ 

শওকত মাস্টারের ফলজ বাগান

শওকত মাস্টার দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধি ও ফলজ গাছ সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন নিজের বাড়ির আঙ্গিনাসহ পুকুরের চারপাশে। শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মেয়েদের সবাই যারযার সংসারে ব্যস্ত। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ বছর আগে মারা যান শওকত মাস্টারের স্ত্রী। ১৭ বছর আগে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতেন। মানুষের কাছে গল্প শুনতেন কোন গাছে কি কি উপকার হয়। কোনটা মানুষের উপকারে আসে আর কোনটা বিরল প্রজাতির গাছ।

শওকত মাস্টার সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করেন হাড়জোড় গাছ। এই গাছের কাণ্ড মানুষ ও পশু পাখির হাত পায়ের ভাঙা অংশ জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হন।

এরপর থেকেই বৃক্ষপ্রেমীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে শওকত মাস্টারের। তিনি বিভিন্ন জনের কাছে শুনে ও শিখে সংগ্রহ করেন এ্যাভোকাষ্ট ফলের গাছ, দিল্লির বিরল জাতের বেল ফলের গাছ, বিদেশি ফল শান্তল, পলাশ ফুল, আলু বোখড়া, ফরচুন, অর্জুন, পাহ্নপাদ, পেস্তা বাদাম, ইকজোড়া ফুল, অড় বড়ইসহ বিভিন্ন জাতের গাছ। 

তার সংগ্রহে রয়েছে- চায়না পেয়ারা, জয়ফল, জয়ত্রী, বোতল ব্রাশ, মিষ্টি তেতুল, কাঞ্চন ফুল, ক্যামেলিয়াসহ ১০২ জাতের বিরল প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ। 

কৃষি বিভাগ থেকে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন শওকত মাস্টার। অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিয়েছেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার।

বৃক্ষপ্রেমী শওকত মাস্টার বলেন, ‘আমি গাছ ভালোবাসি। গাছের সঙ্গে আমার প্রেম ছোট বেলা থেকে। আমি চাই বিশ্বের সব মানুষ গাছ ভালোবাসুক এবং পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন প্রকৃতি গড়তে এগিয়ে আসুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাছ মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখে। আমরা যদি সবাই গাছ লাগাই মানুষের মঙ্গল হবে।’

নাকাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাজু সরকার বলেন, ‘শওকত মাস্টার আমাদের গর্ব। তার নার্সারি দেখে অনেকেই নার্সারি করতে উৎসাহিত হয়েছেন। তার কাছে থাকা বিরল প্রজাতির চায়না পেয়ারা তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার নার্সারির হাড়জোড় গাছ দিয়ে অনেকেই উপকার পেয়েছেন।’ 

গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘শওকত মাস্টার কৃষি বিভাগের অহংকার। তিনি ২০১৪ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে গাছের ও মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি।’