পজিটিভ বাংলাদেশ

মানবিক সহায়তায় স্থায়ী পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পেলেন আয়নাল

দেয়াল চাপা পড়ে গুরুতর আহত আয়নাল হকের চিকিৎসা শেষ হয়েছে। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন। দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের আর্থিক সহযোগিতায় তার চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে বলে আয়নাল হক এ প্রতিবেদককে জানান।      

আয়নাল টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গাগরজান গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত বছর ২৭ অক্টোবর রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় দেয়াল চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। 

আয়নাল হক রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করতেন। ঘটনার দিন একটি বাড়ির পুরাতন দেয়ালের পাশে নতুন দেয়াল তোলার কাজ চলাকালীন পুরাতন দেয়াল ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আয়নাল হকের শরীরের নিচের অংশ চাপা পড়ে। হাতে, মাথায়, মুখের নিচে কেটে গিয়ে গভীর ক্ষত হয় এবং কোমরের নিচ থেকে তিনি কোনো সাড়া পচ্ছিলেন না। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হলে বিভিন্ন পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, আয়নালের কোমরের বাম পাশের হাড় পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ডান পায়ের কুচকির কাছে হাড়েও আঘাত লেগেছে। চিকিৎসকরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে আয়নালের চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় আয়নালের জননাঙ্গেও মারাত্মক জখম হয়। কিন্তু ঢাকায় থেকে চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সঙ্গতি আয়নালের ছিল না।  

বিষয়টি জানতে পেরে আয়নালের পাশে দাঁড়ায় ওয়ালটন। অসহায় এই মানুষটির দিকে বাড়িয়ে দেয় মানবিকতার হাত। দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠান আয়নালের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়।  সে কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞচিত্তে আয়নাল হক বলেন, ‘ওয়ালটন আমার পাশে না থাকলে আমি এতো দ্রুত সুস্থ হতাম না। ওয়ালটনের সহায়তায় আমি এখন অনেকটাই সুস্থ।’

আয়নাল হককে চিকিৎসক ৩ বছর বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। কিন্তু আয়নালের উপার্জনের ওপরই তার পরিবার নির্ভরশীল। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো কেউ নেই। ফলে খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমি ওয়ালটনসহ সমাজের সামর্থবানদের সহযোগিতা কামনা করি।’

প্রতিবেশী সোনিয়া বেগম ও জিনাত বেগম বলেন, ‘আমাদের স্বামীরা আয়-রোজগার করে। ফলে সংসার ও সন্তানদের চাহিদা অনুযায়ী খরচ করতে পারি। কিন্তু আয়নালের স্ত্রী তা করতে পারে না। অনেক সময় তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন জিনিস চেয়ে বায়না করে। কিন্তু সামর্থ না থাকায় কিনতে পারে না। আশেপাশের লোকজন প্রথম দিকে সহযোগিতা করলেও এখন করে না। কারণ এভাবে একটা মানুষকে আর কতটুকুই-বা সহযোগিতা করা যায়!’

আয়নাল হকের স্ত্রী কল্পনা বেগম বলেন, ‘আশেপাশে অন্যের সন্তানের নতুন পোশাক দেখে আমার ছেলেমেয়েরা কাঁদে। কিন্তু কিনে দিতে পারি না। কিনবো কীভাবে যেখানে দু’বেলা খাবার ঠিকমতো জোটে না। খুব কষ্ট লাগে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আয়নাল হককে সহযোগিতা করেছি। তার ভাতার কার্ডের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদনও করেছি।