পজিটিভ বাংলাদেশ

অসময়ের তরমুজে ভাগ্য বদলেছে জয়পুরহাটের কৃষকদের

জয়পুরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচা পদ্ধতিতে বিদেশি বিভিন্ন জাতের বারোমাসি তরমুজের চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে এ তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। 

এদিকে তরমুজে বেশি লাভ হওয়ায় রসালো এ ফলটি উৎপানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে শত শত যুবকের। কৃষকরা বলছেন, এ তরমুজ চাষে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে একদিকে যেমন  কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হবেন, অন্যদিকে সারাবছর এ সুস্বাদু  ফল খেতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

২০১৮ সালে সর্বপ্রথম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় মধুমালা তরমুজ চাষ শুরু করেন । পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে এই তরমুজের চাষ করে ৭০ দিনে তার লাভ হয় ২২ হাজার টাকা। পরে তার এ সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ ফল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। 

বর্তমানে জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার ৬৫টি গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন। এসব জাতের বেশিরভাগ তরমুজ চায়না, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের। বর্তমানে এ তরমুজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী বগুড়া, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা বলেন, ‘একটি বেসরকারি এনজিওর পরামর্শে ২০১৮ সালে আড়াই শতক জমিতে  তরমুজ চাষ শুরু করি। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছি। অসময়ে এ তরমুজ চাষ দেখে  প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু তরমুজের ফলন ভালো হাওয়ায় এবং বাজারে এর চাহিদা থাকায় অনেকেই এই ফলটি চাষ করতে আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো এখন অনেকেই এসব বিদেশি জাতের তরমুজের চাষ করছেন। অসময়ের এই তরমুজ দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এক নজর দেখতে আসেন। আবার কেউ কেউ এসে জমি থেকে টাটকা তরমুজ কিনেও নিয়ে যান।’

কৃষক রেজুয়ান হোসেন বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এবার বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো রয়েছে। আমি এক বিঘা জমির তরমুজ ২ লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি করেছি।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার  গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধান-আলুর চেয়ে তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক। আমি এ বছর ১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বেশি বিক্রি করেছি। জমিতে আরও তরমুজ আছে সেগুলোও বিক্রি করবো।’

ভুতগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কোনো অফিসার আমাদের কাছে আসে না। তাই তরমুজ গাছের কোনো রোগ হলে আমরা বেকায়দায় পরি।’ 

কালাই উপজেলার খুশাল নওপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, ‘বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। ৭৫ দিনে পরিপক্ক হয় তরমুজ। এখন প্রতিটি মাচায় ঝুঁলে আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের প্রায় ২ হাজার ৪০০ তরমুজ। এসব তরমুজ লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি এই মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। বর্তমান বাজারে এই তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি, দামও ভালো আছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হবে। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় হবে ২ লাখ টাকারও বেশি।’

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় প্রায় ৪০০ বিঘার বেশি জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। লাভজনক এ ফলের চাষ আরও বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগারি সহায়তাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’