পজিটিভ বাংলাদেশ

আঁখি এখন সবার ‘নয়নের মণি’

সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী ফুটবল দলের শিরোপাজয়ে দেশজুড়ে বইছে আনন্দের জোয়ার। এই আনন্দের ঢেউ লেগেছে ফুটবলার আঁখির বাড়িতেও। 

সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুর উপজেলার পারকোলা গ্রামের আক্তার হোসেন ও নাছিমা বেগম দম্পতির মেয়ে আঁখি। এলাকাবাসীর কাছে আঁখি এখন ‘নয়নের মণি’। স্থানীয়রা তো বটেই জেলার মানুষও এখন এই নারী ফুটবলারের জন্য গর্ব করছেন। অভাব অনটনের মধ্যে থেকে পল্লীগ্রাম থেকে উঠে এসে আঁখির সাফ শিরোপা জয়কে তারা বিশাল অর্জন বলে মানছেন।  

শিরোপা জয়ের পর আঁখির পরিবার শুভেচ্ছায় ভাসছেন। তবে এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের গল্প। গ্রামে যারা অতীতে আঁখি ফুটবল খেলছেন জেনে নেতিবাচক কথা বলতেন তারাও এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। 

মা বাবার সঙ্গে আঁখি 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাড়কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মো. মনসুর রহমানের কাছে আঁখির ফুটবলে হাতেখড়ি। তার সহযোগিতায় দরিদ্র তাঁতশ্রমিক আকতার হোসেনের মেয়ে আঁখি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব নারী ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে উপজেলা, জেলা, রাজশাহী, এরপর ঢাকায় খেলার সুযোগ পান আঁখি। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। এর আগে খেলেছেন অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে। গত ডিসেম্বরে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় লাল সবুজের দল। এই দলে আঁখিও ছিলেন। 

আঁখির বড় ভাই নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংসার এখন সুখের। আমাদের আর কোনো কষ্ট নেই। আগে আমাদের অভাব ছিল। মা মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে চাল-ডাল আনতো। এখন আনতে হয় না। 

আকতার হোসেন জানান, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মনসুর স্যার এবং ইব্রাহীম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের লাকি ম্যাডাম আমার মেয়েকে (আঁখি) অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আঁখির জন্য আজ আমি গর্বিত ও সম্মানিত। প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। সে অর্থ দিয়ে আমি জমি কিনে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছি।

ইব্রাহীম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, নারী ফুটবলের জয়ের পেছনে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টের অবদান রয়েছে। এখানে খেলেই আঁখির উঠে আসা। ২০১৪ সালে আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তির পর বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে আঁখি। এরপর নাম লেখায় বিকেএসপিতে। সেখান থেকে ডাক পায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলে। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।

জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন আঁখিকে সিরাজগঞ্জের গর্ব উল্লেখ করে বলেন, পুরো খেলা আমি মাঠেই দেখেছি। লং পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ও (আঁখি) সবসময় চাপে রেখেছিল। আমরা অবশ্যই তাকে সংবর্ধনা দেব। 

আঁখিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ।