পজিটিভ বাংলাদেশ

জনপ্রিয় হচ্ছে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ 

সরকারি প্রনোদনা, অনুকুল আবহাওয়া ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে দিয়ে দিন দিন মাদারীপুরে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে। বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ভালো ফলন ও বাজারে এ সব সবজির চাহিদা থাকায় কৃষকরা দিন দিন অনুপ্রাণিত হচ্ছেন সবজি চাষে। এখন বস্তা পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে অপার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। 

জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও জলাবদ্ধ এবং ফসল হয় না এমন পতিত জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা গোপালপুর ইউনিয়নের কৃষক মনতোষ বিশ্বাস। 

কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ, সার, বীজ ও উপকরণ সহায়তা নিয়ে বিলের জলাবদ্ধ জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে করছেন সবজি চাষ। আর এতে বাজিমাত। কৃষক মনতোষ বিশ্বাসের মাঁচায় ঝুলছে সারি সারি লাউ, করলা, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া। কৃষক মনতোষের সফলতা দেখে এলাকার অনেকে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কৃষক মনতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘আমার পতিত জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে ৩৫টি বস্তা ও ৭টি ডিপি পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫/১৬ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বস্তা পদ্ধতির চাষের শুরুতে ৩০ কেজি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো জৈবসার, খৈল ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ বস্তায় ভরে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়। কয়েক দিন পর তাতে লাউ, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙে, পুঁইশাক, মরিচ, আদা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, রসুন ও পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ বপন অথবা চারা রোপণ করা হয়। বস্তা ও ডিপির ৪ থেকে ৬ ফুট উঁচুতে তৈরি করা হয় বাঁশের চালি বা মাচা। সেই চালির ওপর দড়ি দিয়ে বোনা জালের ওপর বাড়তে থাকে বিভিন্ সবজির লতাপাতা আর সেখানে ঝুলতে থাকে বিভিন্ন প্রকারের সবজি।

বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় মনতোষ বিশ্বাসকে দেখে এলাকার অনেকে এখন বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে। 

স্থানীয় চাষি সৈয়দ শামীম বলেন, ‘আমাদের এলাকার মনতোষ বিশ্বাস পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করে সফল হয়েছে, যা দেখে আমার ভালো লেগেছে। আমিও আমার কিছু পরিত্যক্ত জমিতে এই বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করবো।’ 

স্থানীয় যুবক পুলিন মন্ডল বলেন, ‘পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে চাষে মনতোষ বিশ্বাসের সবজি ফলন ভালো হয়েছে দেখলাম। আর সবজিগুলো খেতেও সুস্বাদু তাই আমরা এখান থেকে সবজি কিনে নিচ্ছি।’  কালকিনির উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ‘আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য যে সমস্ত উপকরণ যেমন বীজ, সার, মাচা তৈরির উপকরণসহ বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি। অপেক্ষাকৃত নিচু, পতিত, জলাবদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিরূপ পরিবেশে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।’

কালকিনি উপজেলা কৃষি অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, বৃহত্তর বরিশালসহ ৭ জেলার কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণসহ সকল কলাকৌশল ও উদ্বুদ্ধ করণের মধ্যে দিয়ে বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করা হয়েছে। এতে কৃষকরা সফল হয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জলাবদ্ধ ও ফসল হয় না এমন পতিত জমি এবং বিরুপ আবহাওয়ায় বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষ ব্যাপক লাভবান হওয়া যায়, যার উদাহরণ কৃষক মনতোশ বিশ্বাস। 

তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটবে। এ ছাড়াও এই পদ্ধতিতে চাষ করলে জলাবদ্ধ ও ফসল হয় না এমন পতিত জমি এবং বিরুপ আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ জমি আর অনাদবাদী থাকবে না। এই পদ্বতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে কৃষক উপকৃত হবে।