পজিটিভ বাংলাদেশ

পলিথিন থেকে গ্যাস ও তেল উৎপাদন করছেন লেদ মিস্ত্রি জিয়া

জ্বালানি তেল বিশ্ববাজারে একটি বিশাল অংশ দখল করে আছে। বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের বাজার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও জ্বালানির দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে ডিজেল ও বয়োগ্যাস তৈরির মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাংগা ইউনিয়নের রামভদ্র গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান। তিনি একই গ্রামের একটি ওয়ার্কশপে লেদ মিস্ত্রির কাজ করেন। 

নিজের কাজের পাশাপাশি কীভাবে রাস্তায় পরে থাকা অব্যবহৃত পলিথিনকে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন জিয়াউর রহমান। আর এরই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পরিত্যাক্ত ও পরিবেশ নষ্টকারী পলিথিন কুড়িয়ে এনে বাড়িতে জমাতে শুরু করেন তিনি। এরপর বাড়িতে বড় চুলায় তিনটি ড্রাম দিয়ে তৈরি করেন পলি রিসাইকেলিং ডিজেল মেশিন। এতে তার খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা। 

ড্রামে বিশেষ পদ্ধতিতে জ্বাল দেওয়া হয় পলিথিন

এই মেশিনে বা ড্রামে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিন জ্বাল দেন জিয়াউর রহমান। এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠান্ডা হয়ে ডিজেল ছোট কন্টেইনারে জমা হচ্ছে। আরেকটি পাইপে বেরিয়ে আসে বায়োগ্যাস।

জিয়াউর রহমান তার তৈরী ডিজেল কাজে লাগানো যায় কিনা তা পরীক্ষার কাজও করেন। এই ডিজেল স্থানীয় স্যালো মেশিন, ট্রাকটর, ভটভটিতে ব্যবহার শুরু করেন তিনি। এখন তার রিসাইকেলিং মেশিন থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ লিটার ডিজেল তৈরি হচ্ছে। বাজারে যেখানে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১১২ টাকা সেখানে জিয়াউর রহমান তার তৈরি করা ডিজেল বিক্রি করেন ৮০ টাকা লিটারে।  

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় হয় মাসে। এর ফলে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। এছাড়া তৈরি করা ডিজেল ব্যবহার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যানবাহন চলাচল করছে। আমার বাড়িতে বায়োগ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘হাট বাজার থেকে পরিত্যাক্ত পলিথিন সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে নিজ বাড়ির উঠানে কাজ শুরু করি। তিনটি ড্রামে পলিথিনের কুন্ডলী বানিয়ে নিচে আগুন দিয়ে দেখি পলিথিন গলে ডিজেল তৈরি হচ্ছে। পরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পরিত্যাক্ত পলিথিন সংগ্রহ করে ডিজেল তৈরি শুরু করি। এসময় পাইপ দিয়ে বায়োগ্যাস বের হচ্ছে এবিষয়টি টের পাই। এই বায়োগ্যাস আমি আমার বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করি। আর্থিক সংকট না থাকলে আমি বৃহৎ আকারে ডিজেল তৈরি করে বাজারজাত করতাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে ও আমার তৈরি যন্ত্র দেখতে আসার জন্য সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি আবেদন করেছি।’  

সাজেদা বেগম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘জিয়াউর রহমানের আবিষ্কার দেখতে ও ডিজেল কিনতে প্রতিদিন লোকজন আসছেন।’ 

বিভিন্ন স্থান থেকে বস্তায় করে পলিথিন সংগ্রহ করেন জিয়াউর রহমান

গ্রামবাসী ও ডিজেল ক্রেতা সরফ উদ্দিন, মজনু মিয়া, আব্বাস আলী, বদর উদ্দিন বলেন, এই ডিজেল দিয়ে সুন্দরগঞ্জের ইট ভাটার যানবাহন চলাচল করে। 

ডিজেল ক্রেতা তবিবর রহমান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের বানানো ডিজেলের দাম কম। সে কারণে তার কাছে মানুষজন ডিজেল কিনতে আসেন। বাজার দরের চেয়ে তার কাছে অনেক কম দামে ডিজেল পাওয়া যায়। এতে আমাদের কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।’ 

জিয়াউর রহমানের তৈরি ডিজেল ব্যবহৃত হচ্ছে ভটভটিতে

সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শুনেছি জিয়াউর রহমান পলিথিন দিয়ে ডিজেল তৈরি করছেন। মানুষ তার কাছ থেকে কম দামে ডিজেল কিনে ব্যবহার করছেন। তার এই আবিষ্কার আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’  

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মারুফ বলেন, ‘আমি এখনো ডিজেল তৈরির প্রক্রিয়াটি দেখিনি। তবে আমার কাছে রামভদ্র গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান নামে এক ব্যক্তি আবেদন করেছেন তার ডিজেল তৈরির যন্ত্রটি পরিদর্শন করার জন্য। তার তৈরিকৃত ডিজেল ও বায়োগ্যাস তৈরির ব্যবস্থাটি পরিবেশ বান্ধব কিনা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। খুব তাড়াতাড়ি যন্ত্র ও ডিজেল তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে রামভদ্র গ্রামে যাবো।’