পজিটিভ বাংলাদেশ

অন্ধত্বকে জয় করে এগিয়ে চলেছেন ইকবাল 

মো. ইকবাল হোসেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে অজানা রোগে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। অদম্য ইচ্ছায় ও মায়ের অনুপ্রেরণায় হয়েছেন কোরআনে হাফেজ। এরপর ছোটবেলা থেকেই পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে অন্ধত্ব জয় করে হাল ধরেছেন সংসারের। স্বনির্ভর হতে বাড়ির পাশে করেন একটি চায়ের দোকান। এছাড়া  যুক্ত রয়েছেন সমাজিক কাজকর্ম ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে ।

স্রোতা হিসাবে ইকবার পুরষ্কার পেয়েছেন বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে। তার স্বপ্ন এখন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নকে এগিয়ে নেওয়া। 

শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রাম। এ গ্রামে সবার কাছে পরিচিত মুখ হলেন ইকবাল হোসেন। এই গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে তার বেশ অবদান রয়েছে। আশেপাশের এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ‘মুরাদ বেকার যুব সংঘ’ নামের একটি সংগঠন পরিচালনাও করছেন তিনি। সংগঠনের পক্ষ থেকে অসচ্ছল ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি বছর এই গ্রামে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন ইকবাল হোসেনের গড়ে তোলা এই সংগঠনটি।

ইকবাল হোসেনের চাচি রহিমা বেগম বলেন, ‘সাড়ে ৪ বছর বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হয় ইকবার। এরপর থেকেই তিনি আর চোখে দেখেন না। পরে তাকে নাইঘর গ্রামের হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করানো হয়। বন্ধুদের কাছে শুনে ও শিক্ষকদের একান্ত চেষ্টায় তিনি পুরো কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। ছোটবেলা থেকে ছেলেটা সংগ্রাম করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’

নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগ্রহ আর মেধা শক্তি দিয়ে আল্লাহর রহমতে ইকবাল হোসেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কুরআনে হাফেজ হয়েছেন। বাড়ির সামনে তার একটা চায়ের দোকান রয়েছে। ওই দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালান তিনি। ইকবাল হোসেন নিজে রেডিও শোনেন, অন্যদের রেডিও শোনার জন্য বলেন।’ 

ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার বয়স যখন সাড়ে চার বছর তখন হাম বা এ জাতীয় কোন একটা রোগ হয়। সঠিক চিকিৎসার অভাবে আমি দৃষ্টি হারাই। পড়ালেখা করতে পারিনি। ১০-১২ বছর বয়সে আমাকে মাদরাসার হেফজ বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ওস্তাদ ও বন্ধুদের কাছ থেকে শুনে শুনে কোরআন মুখস্ত করি। ২০১০ সালে বিয়ে করি। পরে সংসার চালাতে বাড়ির সামনে দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে আমার সংসার।  বড় ছেলে এ বছর হেফজ শেষ করেছে।’ 

ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার শখ হলো সমাজিক কাজ করা, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা। এলাকাকাসীদের নিয়ে ‘মুরাদ বেতার যুব সংঘ’ নামের একটি সমাজিক সংগঠন করেছি। বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে বহুবার পুরষ্কার পেয়েছি। আমার স্বপ্ন হলো নিজ ইউনিয়ন, নিজ গ্রামের মানুষের কল্যাণে কাজ করা।’ 

শশীদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘ইকবাল হোসেন একজন সংগ্রামী যুবক। অন্যদের জন্য আদর্শ ও অনুকরণীয়।  আমি তার মঙ্গল কামনা করছি।’

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার সোহেল রানা বলেন, ‘ইকবাল হোসেনের বিষয়টা আমরা শুনেছি। তিনি সামাজিকভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। একজন অন্ধ হয়েও স্বাভাবিক  মানুষের মত মানুষের পাশে এগিয়ে আসার মাধ্যমে তিনি মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’