পজিটিভ বাংলাদেশ

পরিত্যক্ত সুপারির খোলে ১৩ পণ্য, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান 

সারাদেশে সুখ্যাতি রয়েছে কক্সবাজারের সুপারির। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সুপারি দেশের সর্বত্র সরবরাহের পাশাপাশি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও। কিন্তু অব্যবহার্য থেকে যাচ্ছিল সুপারি গাছের ডাল বা খোল। যত্রতত্র পড়ে থাকা সুপারি গাছের ঝরে যাওয়া এসব ডাল বা খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্লেট, বাটি, কৌটাসহ ১৩ ধরনের বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি হচ্ছে টেকনাফে। 

এখন সুপারির খোল ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন টেকনাফের তরুণ উদ্যেক্তা সিরাজুল কবির হিরো। তার চিন্তা এবং চেষ্টার মাধ্যমে বাগানে পড়ে থাকা সুপারি পাতার খোল সম্পদে পরিণত হচ্ছে।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফের শামলাপুরে সুপারির ডাল বা খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি হচ্ছে ১৩ ধরণের পণ্য। বিভিন্ন নকশার এসব পণ্য চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য। এমনকি বিদেশ থেকেও আসছে অর্ডার। 

সিরাজুল কবির হিরোর দাবি, ‘এই উদ্যোগ নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে উদ্যোক্তা ও কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছি আমি। এলাকায় এমন উদ্যোগের কারণে বেড়েছে কর্মসংস্থান। এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন অনেকে। আবার বাগান মালিকরাও সুপারির ডাল ও খোল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।’

খোল বাছাই করছেন সিরাজুল কবির হিরো

শামলাপুর পুরানপাড়ার বাগান মালিক ইমাম শরীফ বলেন, ‘সুপারি গাছের ডাল বা খোলগুলো ভিটে বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকতো। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার হতো বাড়ির আঙিনার বেড়া হিসেবে। এছাড়া খোল ও ডাল রান্নাবান্নার কাজেও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন নারীরা। কিন্তু এখন বিভিন্ন পণ্য তৈরির জন্য আমাদের কাছ থেকে এসব ডাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।’

নয়াপাড়ার সুপারি বাগানের মালিক আবদুল খালেক বলেন, ‘সুপারি খোল দিয়ে নারীরা বাড়ির আঙিনার বেস্টনি দিতেন। কিন্তু এখন শুনতেছি এই খোল দিয়ে বাসন ও প্লেট-বাটি তৈরি হচ্ছে। এতে আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সুপারির খোল বিক্রি করে আমরা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারবো।’

শ্রমিক ইউসুফ বলেন, ‘গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন সুপারি বাগানে গিয়ে সুপারি গাছের ডাল সংগ্রহ করে বাজারে এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিক্রি করি। এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। আগে হাতে কোনো কাজ না থাকলে বসে থাকতে হতো। কিন্তু এখন এই কাজটি শুরু হওয়ার পর থেকে বসে থাকতে হয় না। সুপারির ডাল বা খোল এনে দিলেই মেলে টাকা।’

তরুণ উদ্যোক্তা সিরাজুল কবির হিরো বলেন, ‘প্লাস্টিক পণ্য আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করছে। আমাদের নদী নালা ভরে যাচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যে। এটা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। ২ থেকে ৩ বছর ধরে চিন্তা ভাবনা করে আমার মাথায় আসলো প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সুপারির খোল বা ডাল দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করা যায় কিনা। সে চিন্তা থেকে একটি এনজিওর সহায়তায় নিজ গ্রামে কাজ শুরু করি। পরে সুপারির খোলে তৈরি প্লেট, বাটি ও কৌটার চাহিদা দ্রুত বেড়ে যায়। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও বিদেশ থেকে অর্ডার পাচ্ছি। পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপারির তৈরি পণ্যগুলো যে কেউ যাতে কিনতে পারেন সেজন্য সাধ্যের মধ্যে রেখে আমরা দাম নিচ্ছি। এই উদ্যোগে আমরা যদি সরকারের সহযোগিতা পায় তবে বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবো।’

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক পঁচনশীল নয় বলে পরিবেশ হুমকির মুখে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সুপারি খোল দিয়ে পণ্য তৈরি অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।’