দেহঘড়ি

গরম খাবারে জিহ্বা পুড়ে গেলে ...

স্বপ্নীল মাহফুজ : আমরা অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে সতেজ অনুভব করার জন্য এক কাপ চা বা কফি পান করি। কিন্তু অনেক সময় যখন বেশি গরম চা অথবা কফিতে চুমুক দিয়ে ফেলি, তখন জিহ্বা পুড়ে যায়। এ সময় খুবই অস্বস্তি বোধ হয়। জিহ্বা পুড়ে গেলে আমাদের করণীয় কী? এ প্রশ্নের উত্তরে সহজেই বলা হয়, জিহ্বার জ্বালা কমে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকতে। কিন্তু আপনি চাইলেই কিছু সাধারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে এর থেকে নিরাময় পেতে পারেন। জিহ্বা, ঠোঁট এবং মুখের তালু পুড়ে যাওয়া খুবই সাধারণ একটা বিষয়। কারণ মানুষ চা, কফি, পিৎজাসহ নানা ধরনের খাবার গরম খেতে পছন্দ করে। অনেক সময় খাবার কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না, তাই এমনটি হয়ে থাকে। মানুষের মুখের ভেতরে যে শ্লেষ্মা ঝিল্লি থাকে তা শরীরের অন্যান্য স্থানের ত্বকের তুলনায় অনেক বেশ সূক্ষ্ম, তাই অল্পতেই পুড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জ্যাক্সনভিলের মায়ো ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যালিসন ব্রুস বলেন ‘মুখের ভেতরটা শ্লেষ্মা ঝিল্লির রেখাযুক্ত, এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য ত্বকের মতো এর নিচে স্পঞ্জি বা ফ্যাটি লেয়ার থাকে না, যার কারণে এ জায়গা সামান্য গরমেই পুড়ে যায়।’ অর্থাৎ গরম খাবারকেই শুধু এর জন্য দায়ী করা যায় না, কারণ এ স্থানের ত্বক নিজেও খুব নমনীয়। অন্যান্য স্থানের পোড়ার মতো জিহ্বার পোড়ার তীব্রতাও বিস্তৃত হতে পারে। গরম খাবার এবং তরল পানীয় থেকে বেশিরভাগ পোড়া সাধারণত প্রথম ডিগ্রির পোড়া হয়, যা দ্রুত জ্বালা সৃষ্টি করে এবং মোটামুটি দ্রুত সেরে যায়, সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই (আনন্দের বিষয় হচ্ছে, পোড়া এবং মুখের মধ্যে ক্ষত শরীরের অন্যান্য এলাকার তুলনায় আরো দ্রুত নিরাময় হয়)। হেলথলাইনের তথ্যানুসারে, প্রথম ডিগ্রি জিহ্বা পোড়া বেদনাদায়ক হয় এবং লালভাব বা ফোলা প্রদর্শন করে। কিন্তু আরো গুরুতর লক্ষণ যেমন ফোসকা পড়া দ্বিতীয় ডিগ্রির পোড়া নির্দেশ করে এবং সাদা বা কালো সুস্পষ্টভাবে জিহ্বা পোড়া তৃতীয় ডিগ্রির পোড়ার লক্ষণ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রির পোড়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। গরম খাবার এবং তরল পানীয় থেকে বেশির ভাগ পোড়া সাধারণত প্রথম ডিগ্রির পোড়া হয়, তাই আপনি ঘরোয়া উপায়ে এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে স্বস্তি দিতে পারেন। জেনে নিন জিহ্বা বা মুখের ভেতরের ত্বক পুড়ে গেলে করণীয় কী। ক্ষতস্থান ঠান্ডা করা জিহ্বা পুড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভর ঠান্ডা পানি বা দুধ পান করতে হবে। ঠান্ডা পানি মুখের ভেতরে কিছুটা সময় রেখে দিতে হবে। চাইলে কুলি করে নিন ঠান্ডা পানি দিয়ে। এ ক্ষেত্রে বরফের টুকরা মুখের ভেতরে দিলে সেটি ক্ষতস্থানে আটকে গিয়ে আরো ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়াও হেলথলাইনের পরামর্শ অনুযায়ী, সামান্য চিনি ক্ষতস্থানে দেওয়া যেতে পারে, এতে করে বেদনা কমে যায়। ব্যথার ওষুধ খান (যদি প্রয়োজন বোধ করেন) সাধারণত গরম খাবারে জিহ্বা পুড়লে ওষুধের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যদি আপনি অনেক ব্যথা অনুভব করেন তাহলে ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে acetaminophen অথবা ibuprofen খেতে পারেন। তা ছাড়া Orabase বা Oragel ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতস্থানে। মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখুন আপনার শরীরেই সব ধরনের রোগের ওষুধ থাকে, তাই সামান্য পোড়া নিজে থেকেই সেরে যায়। এ জন্য আপনার মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত ব্রাশ করতে হবে নরম টুথব্রাশ দিয়ে। এ ছাড়া প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার লবণ-পানি দিয়ে কুলি করতে পারেন। লবণ-পানি দিয়ে কুলি করলে তা অ্যান্টিসেফটিকের কাজ করে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া জিহ্বার পোড়া স্থান আঙুল দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না, কেননা এর ফলে তা আরো অস্বস্তি সৃষ্টি করবে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাবে। হালকা ও নরম খাবার গ্রহণ করুন ক্ষতস্থানে ক্ষতি করে এমন খাবার থেকে বিরত থাকাই ভালো। অর্থাৎ অতিরিক্ত মসলাদার, গরম এবং অম্লীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়া চিপস জাতীয় কর্কশ খাবার খাওয়া যাবে না। নরম ও হালকা খাবার খেতে হবে। আইসক্রিম খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তথ্যসূত্র : ইনসাইডার রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/এএন