দেহঘড়ি

মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড কি বিপজ্জনক?

ডা. সজল আশফাক : মোটা হওয়ার কোনো ওষুধ নেই। কথাটি শুনলে অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কেউ হয়তো বলবেন, অমুকে তো অমুক ওষুধ খেয়ে মোটা হয়েছে। কিন্তু মোটা হওয়ার কোনো ওষুধ নেই। তবে কেউ কেউ বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে মোটা হচ্ছে। আর লোকজনকে মোটা হওয়ার সেই সব ওষুধ খাওয়ানো শিখিয়েছে কিছু সংখ্যক অসাধু, অশিক্ষিত চিকিৎসক নামধারী ব্যক্তি। এরা ‘মোটা হউন’ শিরোনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও শারীরিক ক্ষতি করছে। তারা যে ওষুধ দিয়ে মানুষকে মোটা করার চেষ্টা করছে, সেটি শরীর মোটা হওয়ার ওষুধ নয়, তাই এটি এক ধরনের প্রতারণা। আর যে ওষুধটি তারা মোটা হওয়ার কাজে ব্যবহার করছে, সে ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যাওয়া, যাকে তারা মোটা হওয়া বলে চালিয়ে দিচ্ছে অথবা সাধারণ লোকজন এটিকেই মোটা হওয়া ভেবে খুশি হচ্ছে। তথাকথিত মোটা হওয়ার এই ওষুধটি স্টেরয়েড। যেকোনো শিক্ষিত চিকিৎসক অকারণে নিজে নিজে এ ওষুধ খেতে শুনলে আঁতকে উঠবেন। চিকিৎসা জগতে বহু নিন্দিত ও নন্দিত ওষুধ হলো এ স্টেরয়েড। স্টেরয়েড অনেক ক্ষেত্রেই জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। কিন্তু এর অপপ্রয়োগ হলে তা জীবন ধ্বংসকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সাধারণ অ্যালার্জি, বেশ কিছু চর্মরোগ, চোখের অসুখ, বাতরোগ, হাঁপানি, কিছু কিছু অজ্ঞান হওয়ার ঘটনায় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবহার করলে স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। একজন চিকিৎসক সঠিক রোগ নির্বাচন করে সঠিক মাত্রায় এটি (স্টেরয়েড) প্রয়োগ করেন। নির্দিষ্ট কিছু রোগে সঠিক মাত্রায় এর ব্যবহারের ফল অনেকটা ম্যাজিকের মতো। কিন্তু দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে মারাত্মক পরিণতি দেখা যায়। স্টেরয়েডের অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারের ফলে দেহে অতিরিক্ত সোডিয়াম লবণ জমে গিয়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়, হাত-পা, মুখ ফুলে যায়, ঘাড়ে চর্বি জমে, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে মাংসপেশির দুর্বলতা, খিঁচ ধরা ও হাড়ের ক্ষয় হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও পেপটিক আলসারের ঘা শুকাতে দেরি হয়, পুরনো কিছু রোগ নতুন করে দেখা দেয়, নারীদের দাড়ি-গোঁফ গজায় ইত্যাদি অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ-ব্যবহারে দেখা দেয় চোখের ছানি ও গ্লুকোমো, দেহের প্রতিরোধ-ক্ষমতা ক্রমশ ভেঙে পড়ে, যায় ফলে সামান্য সর্দি-কাশিতে অতিরিক্ত বিপত্তি ঘটে। কাজেই মোটা হওয়ার জন্য চিকিৎসক নয় এমন কারো পরামর্শ যারা স্টেরয়েড খাচ্ছেন, তারা সাবধান। মোটা হওয়ার ম্যাজিক প্রত্যাশা দুঃখজনক পরিণতিতে রূপ নিতে পারে। এসব স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বাজারে অনেক নামে পাওয়া যায়। তবে এসব ওষুধের জেনেরিক নাম ওষুধের স্ট্রিপের গায়ে ছোট করে লেখা থাকে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত কিছু ওষুধের জেনেরিক নাম হলো- হাইড্রোকর্টিসন, এন্ড্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, ডেক্সামেথাসন, বিটামেথাসন, ট্রাইএমসিনোলোন, প্রেডনিসোলোন, কর্টিসোন, কার্টিসোল ইত্যাদি। যারা মোটা হতে চান, তাদের উদ্দেশে আবারও বলছি, মোটা হওয়ার কোনো ওষুধ নেই। অধিক চর্বিযুক্ত খাবার-গ্রহণে, বংশগত কারণেও কিছ-কিছু অসুখে মানুষ মোটা হয়। আর মনে রাখবেন, মোটা হওয়া কোনো ভালো ব্যাপার নয়, মোটা হওয়ার কারণে মানুষের রোগ-বালাই বেশি হয়। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মার্চ ২০১৭/এসএন