দেহঘড়ি

মুরগির মাধ্যমে যে চারটি রোগ হয় মানুষের

মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল : শখে বা প্রয়োজনে অনেকেই মুরগি পালন করে থাকে। কিন্তু সচেতনার অভাবে মুরগি থেকে সৃষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ প্রতিবেদনে জেনে নিন, চারটি জীবাণু সম্পর্কে যা, মুরগির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে।  সালমোনেলা সালমোনেলা একটি ব্যাকিটেরিয়া যা সাধারণত মুরগি বহন করে। বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ফার্ম, বাসায় এবং অর্গানিকভাবে পালন করা সব মুরগি এই সালমোনেলা বহন করে। এই ব্যাকটেরিয়া মুরগির কোনো ক্ষতি করে না কিন্তু মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এই জীবাণু মুরগির ছোঁয়া পেয়েছে এমন জিনিসের ওপরও লেগে থাকতে পারে, পরে তা মানুষের সংস্পর্শে আসলে হাতের মাধ্যমে মুখের ভিতরে চলে যায়। এই জন্য মুরগি ধরার পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। এই নিয়ম মেনে চললে সালমোনেলায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আপনার কম হবে। ইউরিনারি ট্রেক ইনফেকশন মুরগির অন্ত্রের মধ্যে অবস্থান করে ইন্টারোকক্কাস ফেকালিস নামক ব্যকটেরিয়া। এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে ইউরিনারি ট্রেক ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে। সালমোনেলার মতো এই জীবাণুও মুরগির বিষ্ঠা থেকে মানুষের মাঝে সংক্রামিত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ এবং পানিতেও ছড়িয়ে পড়ে। যারা সরাসরি মুরগির সংস্পর্শে থাকেন বা বিষ্ঠা থেকে রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা না হয়, তাহলে অসাবধানতায় হাতের মাধ্যমে খাবারে প্রবেশ করে এই ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে গিয়ে অবস্থান নেয়। আস্তে আস্তে তা মূত্রনালীর সংক্রমণ করে থাকে। বিশেষ করে বাইরের পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হিস্টোপ্লাজমোসিস হিস্টোপ্লাজমা ক্যাপসিটিক্যাম নামক জীবাণু দ্বারা এই হিস্টোপ্লাজমোসিস রোগ হয়। এই ছত্রাক মূলত ফুসফুস আক্রান্ত করে, তবে শরীরের অনান্য অংশেও এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। চোখ, চামড়া, অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি, স্নায়ুতন্ত্র এবং যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের মুরগির খাঁচায় এই জীবাণু স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করে। এই ছত্রাক মুরগির বিষ্ঠা থেকে আসে। পরিবেশে রেণু তৈরির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সাহায্যে মানব দেহে প্রবেশ করে। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ মারাত্মক হয় না কিন্তু প্রকৃত হিস্টোপ্লাজমোসিস হয় মারাত্বক। যা টিউবারকিউলোসিস এর মতোই মারাত্বক। এই রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখত হলে সুরক্ষার জন্য ফেস মাস্ক এবং অ্যাপ্রোন পরে মুরগির খামারে প্রবেশ করতে হবে। অন্যভাবে নিয়মিত মুরগির খাঁচা পরিষ্কার রেখেও এর প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। ক্যামফাইলোব্যাকটর সংক্রমণ ক্যামফাইলোব্যাকটর প্রায় সালমোনেলার মতোই। আক্রান্ত ব্যক্তি ডায়রিয়া, পেটের খিচুনি, বমি এবং জ্বরের মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে আরো জটিল সমস্যার জন্য দায়ী। যেহেতু এই সালমোনেলা এবং ক্যামফাইলোব্যাকটর জীবাণু মুরগির বিষ্ঠায় প্রচুর পরিমাণে থাকে, তাই পর্যাপ্ত তাপে রান্না না করে মুরগি বা ডিম খেলেও এই জীবাণু মানব দেহে প্রবেশ করে। নিজেকে রক্ষার জন্য মুরগির মাংস উত্তম তাপে ভালো করে রান্না করতে হবে। উপরোক্ত রোগসমূহ বাসার অল্প সংখ্যক বা বাণিজ্যিক খামারেও হয়। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে অন্যান্য পাখির মাধ্যমেও এ সকল রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। যেমন বাদুর ও এই সকল রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। আপনি না জেনে দূষিত বাতাস বা পানি গ্রহণে আক্রান্ত হতে পারেন। এই ভয়ে আপনি মুরগি পালন বন্ধ করতে পারেন না। একজন নিবেদিত খামারি সঠিক পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। মুরগির খাঁচা নিয়মিত পরিষ্কার সুস্থ্য সবল মুরগি উৎপাদনে সহায়ক।আর ভোক্তাদের সচেতনতা এ সকল রোগ থেকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে। তথ্যসূত্র: সারভাইভাল লাইফ

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ