দেহঘড়ি

শিশুর হেপাটাইটিস-বি

ঝুমকি বসু : আপনার শিশুর কি জ্বর, পেটেব্যথা? ত্বক হলুদ হয়ে গিয়েছে। ভেবে নেবেন না এটা সাধারণ জন্ডিস। হতে পারে হেপাটাইটিস-বি। কীভাবে বুঝবেন? চলুন আজ হেপাটাইটিস-বি সম্পর্কে ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রাক্তন একাডেমিক ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ খায়রুল আমিনের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিই। হেপাটাইটিস-বি কী? জন্ডিস আর হেপাটাইটিস-বি একই রোগের ভিন্ন নাম বলে অনেকেরই একটা ধারণা আছে। আসলে কিন্তু তা নয়। হেপাটাইটিস-বি জন্ডিসের থেকেও অনেক বেশি বিপদজ্জনক। এই রোগের নেই সেরকম ভালো কোনো চিকিৎসা। হেপাটাইটিস-বি হলো লিভারের ইনফেকশন যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ হয়। এর থেকে ক্রনিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং ক্যানসার হতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। রোগের প্রকারভেদ * ক্যারিয়ার- শরীরে জীবাণু ঢুকে ক্যারিয়ার হিসেবে থাকতে পারে। যার মধ্যে ক্যারিয়ার আছে, তার কোনো ক্ষতি হয় না, তবে তার রক্ত থেকে অন্যদের ভেতর রোগের সংক্রমণ হতে পারে। * ক্রনিক- এর তীব্রতা কম, ফলে লাইফ রিস্ক কম থাকে। * অ্যাকিউট- শরীরে জীবাণু দ্রুত ছড়ায় এবং জীবন নিয়ে শঙ্কাও তৈরি হয়ে যায়। এই রোগের লক্ষণ কেমন? জ্বর মাথাব্যথা খাবারে অরুচি বমি শরীর দুর্বল হয়ে পড়া হলুদ রঙের পস্রাব  ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া হেপাটাইটিস-বি কীভাবে ছড়ায়? রক্ত বা শরীরের অন্য কোনো ফ্লুয়িডের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ হয়। ব্লাড ট্রান্সফিউশন, ডায়ালাইসিস, অপরিশোধিত সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া এইসব মাধ্যমে রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। মা রোগের বাহক হলে, গর্ভস্থ সন্তানেরও এই রোগ হতে পারে। কীভাবে বুঝবেন? শিশুর শরীরে যদি জন্ডিসের কোনো লক্ষণ দেখা যায় তাহলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। হেপাটাইটিস-বি সারফেস অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে এই রোগ ধরা পড়ে। টেস্টের ফল যদি পজেটিভ হয়, বিলম্ব না করে চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। চিকিৎসা হেপাটাইটিস-বি যদি অ্যাকিউট অবস্থায় ধরা পড়ে, তাহলে সেভাবে এর কোনো চিকিৎসা নেই। ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি হলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। প্রতিরোধ এই রোগের যেহেতু সেরকম কোনো চিকিৎসা নেই তাই রোগ যাতে না হয় সেদিকেই নজর রাখতে হবে। যেসব উপায়ে রোগ ছড়ায়, সে বিষয়গুলোতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব থেকে নিরাপদ উপায় হলো প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নেওয়া। গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস-বি টেস্ট করানো আবশ্যক। গর্ভাবস্থায় যদি ধরা পড়ে মা হেপাটাইটিস-বি পজেটিভ, তাহলে বাচ্চা জন্মানোর ২৪ ঘন্টার ভেতর হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন দেওয়া দরকার। ভ্যাকসিন ৩টি দিতে হয়। প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়ার ১ মাস পরে দ্বিতীয়টি এবং ৬ মাস পরে তৃতীয়টি দিতে হয়। তৃতীয় ভ্যাকসিনের ৫ বছর পরে অতি অবশ্যই বুস্টার ডোজ দিতে হবে। সতর্কতা অনেক সময় শিশুর অন্য কোনো অসুখের জন্য বাইরে থেকে রক্ত বা প্লাজমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সবসময় খেয়াল রাখতে হবে পরীক্ষা ছাড়া যেন রক্ত শিশুর শরীরে প্রবেশ না করানো হয়। হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত শিশুর খাবারের ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শমতো ডায়েট প্ল্যান করতে হবে। বেশি তেল, মশলা দেওয়া খাবার খাওয়ানো যাবে না। অতিরিক্ত তেল,মশলা দেওয়া খাবারে রোগীর বমি হওয়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৭/ফিরোজ