দেহঘড়ি

ঝুঁকিতে কারা, লক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

সূর্যের তাপ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কদিন ধরে প্রখর রূপ নিচ্ছে। আবহাওয়া অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আরো বেশ কিছুদিন এই তাপদাহ থেকে মুক্তি মিলবে না দেশবাসীর। প্রাকৃতিক এই ঋতু বৈচিত্রের কাছে আমরা নিরুপায়। এই তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। বাড়ছে গরমজনিত বিভিন্ন রোগ। বিশেষ করে এ সময় হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছু বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। হিট স্ট্রোক: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হিট স্ট্রোক মেডিকেল ইমার্জেন্সি। তাপদাহের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রা (৩৫-৪০ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং বাতাসের আদ্রতার অনুপস্থিতিতে কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ সময় তীব্র রোদে অবস্থান করলে অথবা শারীরিক পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। তাপজনিত তারতম্যের কারণে কোনো ব্যক্তির শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা এর বেশি হলে হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোকের পূর্ববর্তী ধাপে রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, শরীরের মাংসপেশীতে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয়, অতিরিক্ত দুর্বল লাগে ও ঠোট, মুখ, জিহ্বা শুকিয়ে পিপাসা পায়। এ ছাড়াও আরো যে লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হলো: * ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায়

* রক্তচাপ কমে যায় ও নাড়ীর স্পন্দন ক্ষীণ হতে থাকে

* ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, তবে শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক হলে অতিরিক্ত ঘামও একটি লক্ষণ

* অসংলগ্ন কথাবার্তা, অস্বাভাবিক আচরণ

* খিচুনি, মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা

* বমি ভাব হতে পারে

* রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে কারা রয়েছেন:

* সাধারণত শিশু বা বৃদ্ধরাই এই তালিকার প্রথমে থাকবে। কারণ শারীরিকভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাদের কম

* দিনে প্রচণ্ড রোদে খোলা জায়গায় কায়িক পরিশ্রম যারা করেন

* অনেক সময় পথচারী বা দীর্ঘ সময় লোডশেডিং হলে বদ্ধ ঘরে থাকা কোনো ব্যক্তির শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলে হিট স্ট্রোক হতে পারে

* কিছু ওষুধ সেবনেও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন মানসিক রোগের ওষুধ, প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ ইত্যাদি হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো দেখা দিলে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিজেরাই নেওয়া যায়:

* রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব শীতল স্থানে নিতে হবে। ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিতে হবে। সম্ভব না হলে জোরে বাতাস করতে হবে

* ঠাণ্ডা পানি দিয়ে রোগীর শরীর মুছে দিতে হবে। দ্রুত শরীরে পানি ঢেলে শরীর ভিজিয়ে বাতাস করে তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে হবে

* তবে ভেজা কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুড়ে দেবেন না

* হাতের কাছে বরফ থাকলে গলার পেছনে, কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন। এতে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমবে

* রোগীর জ্ঞান থাকলে অবশ্যই পানি ও খাবার স্যালাইন দিন

* রোগীর তাপমাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ির স্পন্দনের দিকে লক্ষ রাখুন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান কারণ আংশিক বা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এ ধরণের রোগীকে কখনো পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব নয় প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। সুতরাং সাধারণ কিছু সতর্কতা মেনে চললে গরমের মারাত্মক এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:

* প্রচুর পানি (দিনে অন্তত ২-৩লিটার) ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। এ সময় স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত, মাঠা বা ডাবের পানি খুবই উপকারী

* চা ও কফি পান থেকে বিরত থাকুন, এতে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়

* ফল ও সবজি খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই ভালো

* হালকা রঙের ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরার চেষ্টা করুন

* বাইরে বের হলে ছাতা ও মাথায় টুপি ব্যবহার করুন

* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়ায় থাকার চেষ্টা করুন

* রোদের মধ্যে কায়িক শ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। নিতান্তই সম্ভব না হলে প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে কাজ করুন গ্রীষ্মের এই মধুমাসে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে তাপদাহ মোকাবেলা করে সুস্থ থাকুন।  

লেখক: চিকিৎসক, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল  

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৭/তারা