দেহঘড়ি

নির্দিষ্ট সময়ের আগে বয়ঃসন্ধি ঝুঁকিপূর্ণ

শাহিদুল ইসলাম : বয়ঃসন্ধি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। সাধারণত শহর কিংবা গ্রাম, ধনী বা দরিদ্র যেমন পরিবারেরই শিশু বেড়ে উঠুক না কেন প্রত্যেকের বয়ঃসন্ধির সময় প্রায় একই হওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেন রিসার্স ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক জানিয়েছেন, তুলনামূলক দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা শিশুরা দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে পদার্পণ করে। গবেষকরা আট থেকে এগার বছর বয়সি সন্তান আছে এমন তিন হাজার সাতশত অভিভাবককে তাদের সন্তানদের শারীরিক নানা পরিবর্তনের  বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নগুলো ছিল ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্রণ, ফেসিয়াল ও পিউবিক চুল, পেশী এবং শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মেয়েদের ব্রণ, পিউবিক ও ফেসিয়াল চুল, মাসিক, স্তনের বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে। এসব প্রশ্নের উত্তরে  অভিভাবকরা যা বলেছেন সেগুলোকে গবেষকেরা শিশুদের পারিবারির অবস্থা, শিক্ষা ইত্যাদির ভিত্তিতে দুইটি ভাগে ভাগ করে তুলনা করেছেন। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে সমস্ত বালক শিশু দরিদ্র পরিবারের, তারা ধনী পরিবারের শিশুদের তুলনায় সঠিক  সময়ের অন্তত চার গুণ সময় আগেই বয়ঃসন্ধি কালে পদার্পণ  করছে। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে এ হার অন্তত দ্বিগুণ। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? গবেষকদল এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে  যেয়ে দেখেছেন, আর্থিক অভাব-অনাটনের ফলে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক চাপ তাদের প্রজনন হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে বয়ঃসন্ধি কালকে তরান্বিত করছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হরমোন রিলিজ হওয়ায় জেনেটিক পরিবর্তনও ঘটতে পারে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, সঠিক সময়ের আগে বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ কোনো শুভ সংবাদ নয়। দ্রুত বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করা এসব কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানসিকভাবে যতটা পরিণত হওয়া উচিত তা অর্জন করতে পারে না। তাছাড়া দ্রুত বয়ঃসন্ধিকালী পদাপর্ণ করা কিশোর-কিশোরীর পরবর্তী জীবনে কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ১২ বছর বয়সি মেয়েটির তুলনায় ১১ বছর বয়সি মেয়েটি পরবর্তীতে স্তনের ক্যানসারে ছয় শতাংশ বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এছাড়া ওভারি এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।  অন্যদিকে ছেলেদের প্রোস্টেট ক্যানসারেরর ঝুঁকি ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালে পর্দাপণ বেশি দ্রুত কেন, তা জানা যায়নি। গবেষণাটির অন্যতম লেখক ডা. জন পেরি বলেন, যখন মেয়েরা বয়োঃসন্ধিকালের মধ্য দিয়ে যেতে শুরু করে, সাধারণত ৯ বা ১০ বছর বয়সে, তখন ইস্ট্রজেনের মতো সেক্স হরমোনের সঞ্চালনের জন্য তাদের জীবনকালের এক্সপোজার বৃদ্ধি করে। আমরা মনে করি, এটা সেই হরমোন যা নির্দিষ্ট ধরনের টিউমারের বৃদ্ধিকে জ্বালানি দেয় এবং ক্যানসার বিকাশ করে। কিভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করা যায়, এ ব্যাপারে ডা. পেরি বলেন, ‘বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত করার সহায়তায় ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরকে তাদের সন্তানদের প্রতিদিনের খাওয়া ও শরীরচর্চার দিকে নজর দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শরীর এই রূপান্তরের মধ্য দিয়ে তখন যায় যখন এর জন্য শরীরে যথেষ্ট শক্তির সরবরাহ থাকে। এ  কারণেই  অ্যানোরেক্সিয়া সমস্যগ্রস্ত মেয়েদের সঠিক সময়ে মাসিক শুরু নাও হতে পারে।’ ‘কিন্তু মস্তিষ্কে শিশুরা প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চয় করে থাকে, তাই তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শরীরকে ভাবাতে বাধ্য করে যে, তারা বয়ঃসন্ধিকালে রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত।’ তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৭/ফিরোজ