দেহঘড়ি

সবসময় খারাপ মেজাজের ৮ মেডিক্যাল কারণ

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার মেজাজ কি সবসময় খারাপ থাকে? এমনটা হয়ে থাকলে তার মূলভিত্তি হতে পারে মেডিক্যাল কারণ। রিডার্স ডাইজেস্ট সবসময় খারাপ মেজাজের কিছু মেডিক্যাল কারণ বাছাই করেছে যা আপনার খারাপ মেজাজের কারণ শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে এবং নির্ণীত কারণকে কেন্দ্র করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার মনকে শান্ত করতে পারেন। ১. আপনার থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাচ্ছে

 

এ সমস্যাটি নারীদের জন্য কমন। আপনার গলায় প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি বা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অত্যধিক পরিমাণ হরমোন নিঃসৃত হওয়াকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। মেডিক্যাল ডেইলির ব্যাখ্যামতে, এটি (হাইপারথাইরয়েডিজম) হতে পারে আপনার বাচ্চা এবং অন্যদের প্রতি আপনার চিৎকারের কারণ। ইউনিভার্সিটি হসপিটালস বার্মিংহামের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট নিল গিটোজের মতে, ‘থাইরয়েড হরমোন আপনার মেটাবলিজম বা বিপাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবকিছুকে প্রভাবিত করে। এটি আপনার অস্থিরতা, নার্ভাসনেস এবং মনোযোগহীনতাও বৃদ্ধি করতে পারে।’ ২. আপনার ডায়াবেটিস হচ্ছে

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিস ২০ মিলিয়ন লোককে প্রভাবিত করছে। মেডিক্যাল ডেইলির একটি আর্টিকেলে উদ্ধৃত হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত শর্করা রিসিভ না হলেও কোনো মানুষের রাগ বা বিরক্তি বেড়ে যেতে পারে। মেডিক্যাল ডেইলির আর্টিকেলটিতে আরো উল্লেখ আছে, ‘শর্করার মাত্রায় অভারসাম্য ব্রেইনে সেরোটোনিনের মতো কেমিক্যালের ভারসাম্যহীনতা ঘটায়। এটি মানুষকে আগ্রাসন, ক্রোধ, কনফিউশন এবং এমনকি প্যানিক অ্যাটাকের দিকে চালিত করে।’ ৩. আপনার প্রিমেন্সট্রুয়্যাল সিন্ড্রোম হচ্ছে

নারীদের জন্য বিরক্তিকর একটি বিষয় হচ্ছে, প্রিমেন্সট্রুয়্যাল সিন্ড্রোম বা পিএমএস। মেডিক্যাল ডেইলির আর্টিকেলটিতে বলা আছে, ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের মতো হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীরা অধিক খিটখিটে হয় এবং তাদের রাগ বা বিরক্তি বৃদ্ধি পায়। আমেরিকান কলেজ অব অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজির মতে, আপনার মেজাজ আপনার মাসিক চক্রের শেষ দুই সপ্তাহ এবং আপনার পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ পূর্বে পরিবর্তন হতে পারে। ৪. আপনার দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা আছে

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা খিটখিটে স্বভাবে অবদান রাখতে পারে। অ্যানিটা গার্ডিয়া স্মিথ নামক একজন সাইকোথেরাপিস্ট (যিনি মেরিল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া অ্যান্ড বিথেসডাতে প্র্যাকটিস করছেন) ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টকে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিয়ে বাস করা লোকেরা সবসময় অস্বস্তিকর ও অসামাল অবস্থায় থাকে। অপিউইড পেইনকিলারের মতো কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়ও মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। ৫. আপনার শারীরিক অসুবিধা আছে

মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য অনেক শারীরিক কারণ ভূমিকা পালন করে। নিউ ইয়র্ক সিটির সাইকোথেরাপিস্ট কারেন এ. ডোয়াইয়ার টেসোরিয়েরো বলেন, শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি বা অসুবিধা মানুষকে খিটখিটে স্বভাবের দিকে ধাবিত করতে পারে, শারীরিক অসুবিধার মধ্যে আছে- পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, ক্ষুধার্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া। আপনার মেজাজ উন্নত করার জন্য দিনের প্রধান প্রধান খাবারের মধ্যখানে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরিমিত খাবার খান এবং বেশি করে এক্সারসাইজ করুন। ৬. আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে

ডোয়াইয়ার টেসোরিয়েরো বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রায়ক্ষেত্রে মেজাজকে প্রভাবিত করে। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ, বিষণ্নতা, বাই-পোলার ডিসঅর্ডার, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কিংবা পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভোগা লোকদের মেজাজ খারাপ হতে পারে। প্রায়ক্ষেত্রে, একজন লোক যখন রাগ অনুভব করেন তারা বাহ্যিক উদ্দীপক বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করেন, যা তাদের মধ্যে লজ্জা বা অপরাধবোধমূলক অভ্যন্তরীণ অনুভূতি সৃষ্টি করে।’ তিনি আরো বলেন, যখন একজন ব্যক্তি বলে যে তার মেজাজ সবসময় খারাপ থাকে, তখন তাকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি কারো মেজাজ তাদের পিতামাতা, ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলে, তাহলে তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। ৭. আপনার শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা আছে

আপনি কি পর্যাপ্ত এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করেন? ডোয়াইন টেসোরিয়েরো বলেন, ‘মাথা ক্লিয়ার করা এবং অল্প হাঁটা উদ্বেগ ও বিষণ্নতা হ্রাসে সাহায্য করতে পারে এবং মেজাজও ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এক্সারসাইজ আপনার মস্তিষ্কে ‘ভালো অনুভব’ হরমোন রিলিজ করে যা উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করবে।’ যেকোনো এক্সারসাইজ রুটিন মেনে চলার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। এক্সারসাইজ আপনার আশপাশ কিংবা লোকাল পার্কে হাঁটার মতো সিম্পল হতে পারে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্য মেজাজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ৮. আপনার শরীর সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার স্টেটের কাইরোপ্র্যাক্টর স্কট স্ক্রিবার বলেন, যদি আপনি দিনের সময় ঘরে অবস্থান করেন এবং শুধুমাত্র রাতে বাইরে আসেন, তাহলে আপনার ভিটামিন ডি ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। তিনি বলেন, ভিটামিন ডি ঘাটতি খুব কমন এবং অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার সঙ্গে এটি জড়িত, যেমন- বিষণ্নতা। তিনি যোগ করেন, অধিক রাত পর্যন্ত বাইরে অবস্থান করলে সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত হয়, যার ফলে আপনার দীর্ঘস্থায়ী ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে এবং আপনার মধ্যে সবসময় বিমর্ষ বা মনমরা ভাব থাকতে পারে। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ