দেহঘড়ি

যে ৬ লক্ষণে বুঝবেন ডায়াবেটিক কোমা আসন্ন

মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল : ডায়াবেটিক কোমা জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজ অর্থাৎ শর্করার পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে অথবা খুব কমে গেলে রোগী কোমায় চলে যায়। বিরল ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। ডায়াবেটিস কোমার প্রাথমিক লক্ষণগুলো জেনে, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রতিবেদনে ডায়াবেটিস কোমার প্রাথমিক কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো।     * কাঁপুনি বা ক্লান্তি অনুভব হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া) এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া) উভয়ের ভিন্ন লক্ষণ থাকলেও, ফলাফল কিন্তু একই হতে পারে- ডায়াবেটিক কোমা। পার্ক এভেনিউ এন্ড্রোকাইনোলোজি অ্যান্ড নিউট্রিশন এর ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড এন্ড্রোকাইনোলজি, ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিজম বিশেষজ্ঞ ডা. গিলিয়ান গোডার্ড বলেন, ‘আপনি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তার সতর্ক লক্ষণ হচ্ছে, রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়া এবং কাঁপুনি বোধ হওয়া।’ মায়ো ক্লিনিকের মতে, ‘উচ্চ রক্ত শর্করা আপনাকে ক্লান্ত বোধ করাবে।’ * খুব ক্ষুধার্ত বা শুষ্কতা অনুভব ডা. গোডার্ড বলেন, ‘যদি আপনার ব্লাড সুগার কম থাকে অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে তাহলে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করতে পারেন। তার সঙ্গে ঘনঘন প্রস্রাব ও হতে পারে। অন্যদিকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত শর্করা) হলে আপনার মুখ শুকনো এবং শুষ্কতা অনুভব হতে পারে।’ * অস্থিরতা বোধ রক্তের শর্করার পরিমাণ বিপজ্জনক ভাবে কমে যাওয়ায় ফলে  আপনার অস্বাভাবিক আচারণ প্রকাশ পেতে পারে। ডা. গোডার্ড বলেন, ‘পরিবার থেকে প্রায়ই শোনা যায়, রক্তে শর্করার মাত্রা কম সমস্যাকালীন সময় তাদের প্রিয়জনদের নরমাল সেন্স থাকে না, ক্রুদ্ধ আচরণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বিভ্রান্ত বোধ করেন, তাহলে এটাও একটা লক্ষণ যে আপনাকে রক্তের শর্করা পরিমাপ করা জরুরি।’ * হৃদস্পন্দন বেশি অনুভব ডা. গোডার্ড বলেন, ‘যদি কোনো ডায়াবেটিস রোগী হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন, তাহলে আপনাকে সর্বদা সচেতন হতে হবে যে কম রক্ত শর্করার কারণে এমনটা হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া প্রায় সময়ই উচ্চ রক্ত শর্করার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়।’ * বেশি ঘামা বা প্রচুর প্রসাব হওয়া প্রচন্ড ঘেমে যাওয়া রক্ত শর্করার ঘাটতির লক্ষণ। অন্যদিকে ঘনঘন প্রসাব অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মাত্রায় শর্করার কারণ। * মস্তিষ্কে সমস্যা বা বমি ভাব শরীর যখন তার জ্বালানি খাদ্য গ্লুকোজ বা রক্তের শর্করা থেকে বঞ্চিত হয় তখন সবকিছুই ঘটতে পারে। ডা. শিরা ইটান বলেন, ‘রক্তে খুব বেশি পরিমাণে শর্করা কমে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে সমস্যা বা কোমা পর্যন্ত হতে পারে।’ প্রতিরোধের উপায় * সব সময় হালকা নাস্তা সঙ্গে রাখুন : সঙ্গে সবসময় হালকা কিছু খাবার থাকা আপনার রক্তের শর্করাকে মারাত্মক পর্যায়ে কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড এন্ড্রোকাইনোলজি, ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিজম বিশেষজ্ঞ ডা. শিরা ইটান বলেন, ‘আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন তাহলে সঙ্গে থাকা হালকা খাবার যেমন কিশমিশ বা জেলিবিন দ্রুত আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ফেরাতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আপনি গুরুতর নিম্ন রক্তে শর্করা প্রবণ হন, তাহলে সঙ্গে সবসময় গ্লকাগন পেন থাকা উচিত। অচেতন হচ্ছেন মনে হলে বা কিছু খেতে না পারলে তখন তা ইঞ্জেকশন করলে দ্রুত শর্করা পাবে শরীর।’ * খাবারের উপযুক্ত পরিকল্পনা : ডা. ইটান বলেন, ‘আপনার উচিত হবে নিয়মিত ও পরিমাণমতো খাওয়া নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে খাবারে কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিনের ভারসাম্য ঠিক রাখা, যা আপনার রক্তে শর্করার পরিমান ঠিক রাখবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি আপনি ইনসুলিন অথবা সালফোনিলুরিয়াস জাতীয় ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করেন তাহলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কম গেলে তা খুব বিপজ্জনক। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে কোনো বেলা খাবার যেন বাদ না পড়ে।’ * প্রিয়জনদের বিপজ্জনক লক্ষণগুলো শিখানো : কখনো কখনো ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ আপনি খেয়াল নাও করতে পারেন, কিন্তু যদি লক্ষণগুলো আপনার বন্ধু বা পরিবারের কারো জানা থাকে তাহলে তারা আরো খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়ার আগেই সহায়তা করতে পারবে। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট  

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ