দেহঘড়ি

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অজানা তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল : বর্তমান বিশ্বে ওবেসিটি বা স্থূলতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসও বাড়ছে, কারণ উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রতিবেদনে টাইপ ২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে ৯টি তথ্য (কিছু বিস্ময়কর তথ্যও রয়েছে) দেওয়া হলো, যা সম্পর্কে হয়তো আপনি জানেন না। আসুন প্রতিবেদনে চোখ বুলিয়ে নিই। * বড় বাচ্চা প্রসব করা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রিস্ক ফ্যাক্টর নয় পাউন্ড বা এর চেয়ে বড় বাচ্চার জন্ম দেওয়া কোনো নারীর টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যেসব নারীদের জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস থাকে তাদের গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং তারা তুলনামূলক বড় বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে, কিন্তু গড় ওজনের চেয়ে বড় বাচ্চা প্রসব করা হচ্ছে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের একটি রিস্ক ফ্যাক্টর, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস থাকুক কিংবা না থাকুক। * অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দমন করা যেতে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিস যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দমন করা যায় তা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। কাহন সেন্টার অব কার্ডিয়াক লংজিভিটির প্রতিষ্ঠাতা জোয়েল কাহন বলেন, ‘টাইপ ২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হচ্ছে এটি সাধারণ উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ে আমার লক্ষ্য হচ্ছে এটি দমন করা এবং হোল ফুড, উদ্ভিদভিত্তিক খাবার, লো-ফ্যাট ডায়েট, এক্সারসাইজ এবং সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে তাদের ডায়াবেটিক অবস্থা নির্মূল করা।’ তিনি যোগ করেন যে এই পদক্ষেপ তার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সত্যিই কাজ করেছে। * টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকাশে জেনেটিক্স ভূমিকা পালন করে অন্যান্য রোগ ও দশার মতো জেনেটিক্স টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকাশেরও ঝুঁকি হতে পারে। আপনার পরিবারে কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে আপনারও নিশ্চিত এই ডায়াবেটিস বিকশিত হবে তা নয়। পারিবারিক ইতিহাসের চেয়ে ডায়েট ও লাইফস্টাইলের সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অধিক সম্পর্ক রয়েছে, যদিও ভাই-বোন বা মা-বাবার কারো থাকলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। * টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে চিনির সরাসরি সম্পর্ক নেই শরীর কতটুকু ইনসুলিন উৎপাদন করে এবং শর্করা শোষণ করে তার সঙ্গে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, তাই টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি গ্রহণ সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকতে হয়। অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে চিনির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু সার্বিক স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা এবং ওজন হ্রাস ও ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য চিনি গ্রহণ সীমিত করা ভালো। ডা. কাহন বলেন, ‘সোডা ও সুইটে চিনি লিমিট করা এবং সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত খাবারে অ্যাডেড ফ্যাট সীমিত করাও টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ চিনির সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও এটি নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার জন্য চিনি সীমিত করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। * টাইপ ২ ডায়াবেটিস অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায় ডা. কাহনের মতে, ‘স্থূলতার সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিকাশ কার্ডিভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে।’ এই ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি দুই থেকে চারগুণ বৃদ্ধি করে, কারণ বর্ধিত রক্ত শর্করা আর্টারি ও নার্ভের ক্ষতি করতে পারে, যার সঙ্গে অস্বাভাবিক রক্ত কোলেস্টেরল, রক্তচাপ ও প্রদাহের সংযোগ রয়েছে, ডা. কাহন বলেন। * টাইপ ২ ডায়াবেটিস নির্ণীত হওয়া মানেই ক্রাশ ডায়েট নয় আপনি শুনে বিস্মিত হতে পারেন যে আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও আপনার অধিকাংশ প্রিয় খাবার খেতে পারবেন। ডা. কাহন বলেন, ‘আমার টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীরা বিস্মিত হয় যে তারা প্রচুর পরিমাণে হোল ফ্রুট (অপ্রক্রিয়াজাত ও অপরিশোধিত ফল) খেতে পারছেন, এমনকি আম ও পেঁপেও (অ্যাডেড অয়েল ও ডায়েটারি ফ্যাট সীমিতকরণ সাপেক্ষে)।’ অ্যাডেড ফ্যাট বর্জন করে এ রোগের রোগীরা ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি ফিরিয়ে আনতে পারে এবং সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর ও রঙিন হোল ফুডস খেতে পারে। * টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকাশে হরমোনের অবদান থাকতে পারে নারীদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে হরমোন আধিপত্য বিস্তার করে। জোসলিন ডায়াবেটিস সেন্টার অনুসারে, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের (পিসিওএস) নারীদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ এই দশা প্রদাহ ও অতিরিক্ত ইনসুলিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। * পরিষ্কার মুখ মানেই ক্লিন বিল অব হেলথ (সম্পূর্ণ ফিট ও সুস্থ লোক) আপনি ওরাল কেয়ার বা মুখের যত্ন নিয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারেন। যেকোনো ধরনের প্রদাহ, এমনকি জিনজিভাইটিসও, শরীরের অন্যান্য অংশে প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করতে পারে, এ কারণে আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন দাঁতের মারাত্মক সমস্যা প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন ব্রাশিং ও ফ্লসিং করতে পরামর্শ দিচ্ছে। * ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ মানে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ ও এক্সারসাইজ অনুশীলন নয় ডা. কাহনের মতে, ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা ও ব্যায়াম চর্চা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারা স্বাস্থ্যসম্মত লাইফস্টাইলের দুইটি অংশ, কিন্তু আপনাকে আরো কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, যেমন- পর্যাপ্ত ঘুম যাওয়া ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা।’ তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ