দেহঘড়ি

শিশুর পেটে গ্যাস, সমস্যা দূর করবেন কিভাবে?

আহমেদ শরীফ : ছোট্ট শিশুরা পেটে গ্যাসের সমস্যায় ভোগে বেশি। শিশুরা মায়ের দুধ বা ফিডারের দুধ খাওয়ার সময়, এমনকি অতিরিক্ত কান্না করার সময় তাদের পেটে প্রচুর বাতাসও চলে যায়। আর তাই শিশুর পেটে গ্যাস হয় অনেক। নবজাতক শিশুদের দিনে ১৩-২১ বার পেট থেকে গ্যাস নির্গত হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই অতিরিক্ত গ্যাস পেটে থাকার কারণে তা শিশুর শরীরে বেশ পীড়াদায়ক হয়ে উঠে।  গ্যাসের সমস্যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদে। এছাড়া তার পেটে শূল বেদনার আশঙ্কাও থাকে তখন। কিভাবে বুঝবেন শিশুর পেটে গ্যাস আছে : যখন শিশুর পেটে গ্যাস আটকে থাকে, তখন কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে, যা দেখে বুঝতে পারবেন তার পেটে গ্যাস আছে- * ঢেকুর দিলে * অস্থিরতা দেখা দিলে * তার পেট ফোলা থাকলে * শিশু কান্না করতে থাকলে * বায়ু ত্যাগ করলে * তলপেট শক্ত হয়ে থাকলে * শিশু তার দুই পা উপরের দিকে তুলে রাখলে শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার আরো কারণ : মায়ের দুধ বা ফর্মুলার দুধের মাধ্যমে বাই প্রডাক্ট হিসেবেই শিশুর পেটে গ্যাস চলে যায়। তবে এরই মধ্যে বাইরে থেকে আরো গ্যাস পেটে জমা হলে তা শিশুর পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে। আর সমস্যাটা যেহেতু বুঝাতে পারে না, তাই সেসময় অনবরত কান্না করে শিশু। যেসব কারণে শিশুর পেটে গ্যাস জমা হয়- * শিশু মায়ের স্তনে বা দুধের বোতলে সঠিকভাবে মুখ দিয়ে দুধ পান করতে না পারলে তার পেটে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে পড়ে। * যদি শিশু প্রচুর কান্না করে, তাহলে তার পেটে আরো গ্যাস ঢুকে পড়ে। আর এভাবে শিশু যতো কান্না করে তার পেটে চক্রাকারে ততো গ্যাস জমা হয়। * শিশুর মা যেসব খাবার খায়, তাতে গ্যাস উৎপাদনের উপাদান থাকলে তা শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে। * অতিরিক্ত দুধ পান করানোর কারণেও শিশুর পেটে গ্যাস জমা হয়। * এছাড়া হরমোনজনিত সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া এসব কারণেও শিশুর পেটে গ্যাস হয়। শিশুর মায়ের যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ না : নবজাত শিশু বা দুধ পান করানো শিশুর মায়েদের উচিৎ তাদের খাওয়া কোনো খাবার যেন শিশুর পেটে গ্যাস জমা না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে দুধ ও দুধজাত সব খাবার। তাই মায়েদের উচিৎ দুধ, পনির, দই, পুডিং, আইসক্রিম, মাখন, ঘি সহ দুধ থেকে তৈরি খাবার বর্জন করা। এছাড়া ডিম, মাছ, গম, শিম, ফুলকপি, ব্রকোলি, মসলাদার মাংস, চিংড়ি, বাদাম এসব খাবারও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই এসব খাবার না খাওয়া ভালো। শিশুর পেটের গ্যাস দূর করার উপায় : গ্যাসের কারণে শিশুর পেটের ব্যথা দূর করে স্বস্তি দিতে হলে কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেমন- * দুধ পানের পদ্ধতি সঠিক রাখা : শিশুকে মায়ের দুধ বা ফিডারে দুধ পান করানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর মাথা তার পেটের চেয়ে কিছুটা উপরের দিকে থাকে। এতে করে দুধ সহজে শিশুর পেটে যায় ও পেট থেকে বাতাস বের হয়ে যায়। * পিঠে চাপড় দেয়া : শিশুর পেট থেকে গ্যাস বের করার সহজ একটি উপায় হলো দুধ পান করানোর সময় ও দুধ পান শেষে তার পিঠে আলতো করে চাপড় দিতে থাকা। এতে করে শিশু ঢেকুর দিলে তার পেট থেকে গ্যাস বের হয়ে যাবে। শিশু ঢেকুর না দিলে তাকে চিৎ করে কয়েক মিনিট শুইয়ে রাখার পর আবারো পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে তাকে ঢেকুর দেয়ার চেষ্টা করাতে হবে। * পেটে ম্যাসাজ করা : শিশুর পেট আলতো করে ম্যাসাজ করা হলে তার পেট থেকে গ্যাস বের হওয়া ত্বরান্বিত হবে। শিশুর শরীর কুসুম গরম সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা ও কুসুম গরম পানিতে তাকে গোসল করানো হলেও তার গ্যাসের সমস্যা কমবে। * বাইসাইকেল চিকিৎসা : শিশুকে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার দুই পা ধরে বাইসাইলে চালানোর ভঙ্গিতে নাড়াচাড়া করতে হবে। এতে তার পেট থেকে গ্যাস দূর হওয়ার সুযোগ পাবে। * কান্না থামাতে হবে : শিশু যতো কাঁদবে, তার মুখ দিয়ে পেটে ততোই গ্যাস ঢুকে যাবে। তাই শিশুর কান্না দ্রুত থামানোর চেষ্টা করতে হবে খেলনা দেখিয়ে বা শব্দ করে। * প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া : চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) জাতীয় কিছু ওষুধ সেবন করাতে পারেন শিশুকে। মনে রাখতে হবে: * শিশুর চার মাস বয়স পর্যন্ত তার শূল বেদনা থাকতে পারে। আর তাই এ সময় শিশু বেশি বাতাস পেটে নেয় বলে তার গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। * শিশুর পায়খানা না হলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে, বমি হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। * শিশু যদি বেশি অস্থিরতা করে, তাকে থামাতে কষ্ট হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। * শিশুর গায়ে ১০০ ডিগ্রির বেশি জ্বর থাকলে, তার বয়স ৩ মাসের কম হলে ধরে নিতে হবে তার শরীরে ইনফেকশন আছে। তাই তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরি। তথ্যসূত্র : ওয়েবএমডি, মামিস ব্লিস, প্যারেনটিং ফার্স্টক্রাই রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ