দেহঘড়ি

হিট স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

ডা. সজল আশফাক : দাবদাহে দেশের মানুষ এখন মারাত্মক অবসাদগ্রস্ত। সেইসঙ্গে রোজা। রোজাদারদের জন্য খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। কারণ প্রচণ্ড গরমে সীমাহীন ক্লান্তি এসে ভর করেছে দৈনন্দিন জীবনে। গরমের কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। এই ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান লবণ ও পানি। শরীর থেকে লবণ ও পানি বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেহের রক্তচাপও কমে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণও কমে। পাশাপাশি অবসাদ এসে শরীরে ভর করে। প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল লাগে। মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা ক্র্যাম্প হতে পারে। গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব হতে পারে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এটি গরমের কারণে সৃষ্ট প্রাথমিক অবস্থা। অসহ্য গরমে শুরুর দিকে এমনটিই হয়। এসব কিছুই হয় অতিরিক্ত ঘামের জন্য অর্থাৎ শরীর থেকে লবণ পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রচুর পানি পান করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। মাঝেমধ্যে লবণ পানি বা স্যালাইন খেলে আরো ভালো। দুঃসহ গরমে হঠাৎ জ্ঞান হারানো বিচিত্র কিছু নয়। গরমে জ্ঞান হারানোর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। দাবদাহের সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি হচ্ছে হিট স্ট্রোক। সাধারণভাবে মানুষের মস্তিষ্কের একটি অংশ শরীরের তাপমাত্রাকে উপযোগী এবং সহনীয় একটি মাত্রায় রাখার চেষ্টা করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কিন্তু তীব্র গরমে শরীরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠান্ডা রাখার এই প্রক্রিয়া কাজ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে শরীরে তখন গরমের কারণে ঘাম তৈরির জন্য কোনো পানি অবশিষ্ট থাকে না। শরীর তখন অনেক গরম ও শুষ্ক থাকে। এ অবস্থায় একজন মানুষ জ্ঞান হারিয়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। হিট স্ট্রোকের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি স্প্রে কিংবা ঢেলে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলেও এই কাজটি করতে হবে। রোগীর শরীরে যে পানির প্রবাহ দেয়া হবে তা ঠান্ডা হওয়ার দরকার নেই। পানি খুব ঠান্ডা হলে সমস্যা হবে। ঠান্ডা পানি শরীরের বা কেন্দ্র থেকে দূরের অর্থাৎ প্রান্তীয় রক্তনালীসমূহকে সংকুচিত করে ফেলে, এতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। আর কোথাও রক্ত প্রবাহ কম থাকা মানেই সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকা। যা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এছাড়া রোগীর শরীরের পরিধেয় যতটুক সম্ভব খুলে ফেলতে হবে এবং ঘরের ফ্যান কিংবা এসি চালিয়ে দিতে হবে। এসবের ব্যবস্থা না থাকলে পাখা দিয়ে বাতাস দিতে হবে। ইতিমধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হিট স্ট্রোক একটি মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। হিট স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো খুবই জরুরি। হিট স্ট্রোক এড়াতে আগে থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। হিট স্ট্রোক এড়াতে গরমে যতটা সম্ভব রোদে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরিধান করতে হবে। সিনথেটিক এবং আঁটসাঁট পোশাক না পরাই ভালো। কারণ সিনথেটিক কাপড়ের মধ্য দিয়ে বাতাস সুবিধাজনকভাবে চলাচল করতে পারে না। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করেন এবং যাদের বেশি ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের ক্ষেত্রে পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে তিন লিটার পানি পান করা দরকার। গরমের সময় সেই পানি পানের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। মোট কথা যতক্ষণ না প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে ততক্ষণ ধরে পানি পান করে যেতেই হবে। শরীরে ঘাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে পানিতে খানিকটা লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে খাবার স্যালাইন পান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৯/তারা