দেহঘড়ি

অ্যান্টিবায়োটিক : চিকিৎসককে যে প্রশ্নগুলো করা উচিত

এস এম গল্প ইকবাল : অসুস্থতায় ভোগার কারণে চিকিৎসকের কাছে গেলেন। তিনি আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করলেন। এই প্রেসক্রিপশন নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পূর্বে আপনার চিকিৎসককে অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করুন। এসব প্রশ্নের উত্তর পেলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কার্যকারিতা বেড়ে যেতে পারে ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সমস্যা প্রতিরোধ হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পূর্বে আপনার চিকিৎসককে যে প্রশ্নগুলো করা উচিত তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* কেন খেতে হবে?

প্রত্যেক রোগীর এটা জেনে নেওয়া উচিত যে কেন তাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হয়েছে, বলেন আমেরিকান ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ও ফ্লোরিডার ক্লিনিক্যাল কনসালটেন্ট ফার্মাসিস্ট নরম্যান টোমাকা। একটি জেএএমএ গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক ভুলভাবে প্রেসক্রাইব করা হয়ে থাকে। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলে নিশ্চিত হোন যে আপনার প্রেসক্রিপশনটি সবচেয়ে সেরা অপশন।

* কখন খাওয়া লাগবে?

প্রতিদিন তিনবার ওষুধ সেবন ও প্রতি আট ঘণ্টা পরপর ওষুধ সেবনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, বলেন আমেরিকান সোসাইটি অব হেলথ সিস্টেম ফার্মাসিস্টস কনজ্যুমার মেডিকেশন ইনফরমেশনের এডিটর ও ফার্মেসির ডাক্তার বারবারা ইয়াং। সবচেয়ে কার্যকর ফল পেতে নির্দিষ্ট সময় পরপর ওষুধ সেবন করা উচিত, যেমন- প্রেসক্রিপশনে প্রতিদিন (২৪ ঘণ্টা) তিনবার ওষুধ সেবনের কথা উল্লেখ থাকলে প্রতি ৮ ঘন্টায় ওষুধ সেবন করুন, প্রতিবেলায় খাবার খাওয়ার সময় নয়- কারণ আপনি ঠিক ৮ ঘণ্টা পরপর প্রতিবেলার খাবার খান না। প্রেসক্রিপশনে দিনে তিনবার ওষুধ সেবনের কথা উল্লেখ থাকার মানে এটা নয় যে, সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই তিনবার ওষুধ সেবন করে ফেলবেন। নির্দিষ্ট সময় পরপর ওষুধ সেবন করলে রক্তপ্রবাহে ওষুধের সঠিক মাত্রা বজায় থাকে বলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

* ভরাপেটে খাওয়া লাগবে?

খাবার খাওয়ার পরপরই ওষুধ সেবন করলে ওষুধটি আপনার সিস্টেমে কিভাবে শোষিত হচ্ছে তার ওপর প্রভাব পড়বে। ভরাপেটে ওষুধ সেবন করলে ওষুধ সেবন জনিত বমিবমি ভাব প্রতিরোধ হবে, কারণ পেটে খাবার থাকার কারণে ওষুধটি আপনার পাকস্থলিকে উক্ত্যক্ত করতে পারে না, বলেন আমেরিকান ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র, পেনসিলভানিয়ায় অবস্থিত হার্টজেল'স ফার্মেসির সভাপতি ও ফার্মেসির ডাক্তার ভিনসেন্ট হার্টজেল। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে খালিপেটে ওষুধ সেবনের কথা উল্লেখ থাকলে খালিপেটেই সেবন করতে হবে, কারণ খাবার এই ওষুধকে রক্তপ্রবাহে শোষিত হতে দেবে না।

* কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যেতে হবে?

কিছু ওষুধ কিছু খাবারের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দুগ্ধজাত খাবার টেট্রাসাইক্লিনের কার্যকারিতা কমিয়ে ফেলে, কারণ এসব খাবারের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে এই অ্যান্টিবায়োটিক সংযুক্ত হয়ে পড়ে, তাই ওষুধটি আপনার শরীরে যতটুকু শোষিত হওয়ার কথা ততটা হবে না, বলেন ইয়াং। আপনার নিরাময়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

* পুরো এক গ্লাস পানি পান করা লাগবে?

টোমাকা বলেন, ‘এক গ্লাস পানি পাকস্থলির কনটেন্টগুলোকে মেশাতে পারে এবং এটি আপনার পেট উক্ত্যক্ত হওয়ার পূর্বেই অ্যান্টিবায়োটিককে শোষিত হতে সাহায্য করতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘ওষুধ সেবনকালে পর্যাপ্ত পানি পান করলে ওষুধ সেবন জনিত বমিবমি ভাব প্রতিরোধ হয়। এছাড়া অনেক ওষুধ ভালোভাবে শোষিত হওয়ার জন্য পুরো এক গ্লাস পানি পানের প্রয়োজন রয়েছে।’ টোমাকা আরো বলেন, ‘একটি ক্যাপসুল পাকস্থলিতে না পৌঁছা পর্যন্ত গলে না এবং এটি পানির সঙ্গে সেবন করলে বমিবমি ভাবের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়।’

* প্রোবায়োটিকও খাওয়া লাগবে?

আপনার শরীরের সকল ব্যাকটেরিয়া আপনাকে অসুস্থ করে না, আপনার পাকস্থলির কিছু ব্যাকটেরিয়া সুস্থ অন্ত্র অথবা সুস্থ প্রজননতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ভালো ব্যাকটেরিয়া ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণে ব্যর্থ হতে পারে। হার্টজেল বলেন, ‘অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক কেবলমাত্র ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস করে না, এসব ওষুধ নানা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে, যার মধ্যে আপনি ধ্বংস করতে চান না এমন ব্যাকটেরিয়াও রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনার সেবনকৃত ওষুধ উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করলে পেটের সমস্যা, মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশন অথবা ইস্ট ইনফেকশন হতে পারে।’ এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে আপনার চিকিৎসক প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই অথবা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ