দেহঘড়ি

যেসব যৌন সমস্যা অবহেলা করবেন না (শেষ পর্ব)

মানব সভ্যতা টিকে থাকার পিছনে যৌনজীবনের গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত শারীরিক ও মানসিক সুখের আশায় পুরুষ নারীর সঙ্গ চায়, সহবাসে লিপ্ত হয়। কিন্তু সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে যৌন সমস্যা। ব্যক্তিভেদে সহবাসের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে- কেউ আনন্দ পেতে পারেন, কেউ হতে পারেন অসুখী। এই অসুখী বা অতৃপ্ত হওয়ার কারণ যৌন সমস্যা। অনেকে মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর যৌন সমস্যায় ভুগলেও চিকিৎসকের কাছে যান না লজ্জায় বা ভয়ে। কিন্তু এটি অবহেলা করা উচিত নয়। যৌন সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ শেষ পর্ব।

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন : আমরা জানি, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হলে পুরুষদের ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থান হয় না। এর প্রধান কারণ, পুরুষাঙ্গে রক্ত প্রবাহের ঘাটতি। ডা. মাইকেল বলেন, ‘ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে আপনার পুরুষাঙ্গ সঙ্গিনীকে খুশি করার মতো তেজি হতে পারবে না। তখন অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ পুরুষাঙ্গ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে যথেষ্ট রক্তপ্রবাহ না হলেও আপনি সহবাসে অক্ষম হতে পারেন।’

জ্বালাপোড়া বা চুলকানি : যদি আপনার শরীরের গোপনাংশে চুলকায় অথবা জ্বালাপোড়া করে, তাহলে সম্ভবত আপনার ইস্ট ইনফেকশন অথবা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস হয়েছে। ডা. মাইকেল বলেন, ‘ক্যানডিডা ইস্টের ভারসাম্য হারালে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে- হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন, ডুশ করা বা ভ্যাজাইনাল স্প্রে, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।’ যেহেতু এই ইনফেকশন যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, তাই সেরে না ওঠা পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত।

অর্গাজমে কাঠিন্য : কিছু নারীর সহজে অর্গাজম হয় না। এ প্রসঙ্গে ইয়েল ইউনিভার্সিটির অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর মেরি জেন মিনকিন বলেন, ‘অনেক নারী মনে করেন, এটি সমস্যা, কিন্তু আসলে তা নয়। অধিকাংশ নারীর অর্গাজমের জন্য কিছু মাত্রায় ক্লিটোরাল স্টিমিউলেশন (ক্লিটরিসে উদ্দীপনা) প্রয়োজন। কেবলমাত্র ভ্যাজাইনাল স্টিমিউলেশনে তাদের অর্গাজম হয় না। ক্লিটরিস উদ্দীপ্ত করার পরও আপনার অর্গাজম না হলে তখন বুঝতে হবে সমস্যা হয়েছে।’

পেনিস ফ্র্যাকচার : আনকমন হলেও পুরুষের পেনিসে ফ্র্যাকচার হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অব হিউম্যান সেক্সুয়ালিটির অন্তর্ভুক্ত ক্লিনিক্যাল সেক্সোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর স্টিভ ম্যাকগাফ বলেন, ‘লিঙ্গোত্থানে সাহায্যকারী দুটি অংশ হলো করপোরা কেভারনোসা ও পেনাইল শিথ বা টিউনিকা অ্যালবুজিনিয়া নামক নমনীয় পর্দা। কোনো কারণে পেনিসের এ দুটি অংশ ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়াকে পেনিস ফ্র্যাকচার বলে।’ সাধারণত সহবাস বা হস্তমৈথুনের সময় পেনিস খুব বেশি বেঁকে গিয়ে এ ধরনের ফ্র্যাকচার হয়। অথবা দুর্ঘটনাজনিত ট্রমা থেকেও পেনিস ফ্র্যাকচার হতে পারে।

গোপনাঙ্গে আঁচিল : সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দ্বারা জেনিটাল ওয়ার্ট বা যৌনাঙ্গে আঁচিল হয়ে থাকে। এই কমন যৌনবাহিত রোগটি প্রায়ক্ষেত্রে অগোচরে থেকে যায়। ডা. ম্যাকগাফ বলেন, ‘যেহেতু যৌনাঙ্গের আঁচিল জরায়ুমুখ বা মলদ্বারে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই ইনফেকশন যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত ও চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজনা : অনেক লোক মোটেই উত্তেজিত হতে পারেন না বলে দুশ্চিন্তা করেন। আবার কিছু লোকের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটে। প্রতিনিয়ত যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়াকে পারসিস্টেন্ট জেনিটাল অ্যারাউজাল ডিসঅর্ডার (পিজিএডি) বলে। নারীদের ক্ষেত্রে এর মানে হলো, তারা না চাইলেও প্রতিনিয়ত ক্লিটোরিয়াল অর্গাজম হচ্ছে। ডা. নেলসন বলেন, ‘এটি হাস্যকর মনে হলেও বিষয়টি মোটেই অবহেলার নয়। সমস্যাটি একজন মানুষকে যন্ত্রণা দিতে পারে, বিব্রত করতে পারে ও জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।’ আপনার পিজিএডি থাকলে গাইনোকোলজিস্ট অথবা পেলভিক ফ্লোর থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হোন। ঢাকা/ফিরোজ/তারা