আমাদের গলার ভেতরে দুটি ডিম্বাকৃতির গ্ল্যান্ড আছে, এগুলো টনসিল নামেই পরিচিত। আমাদের মুখ ও নাক দিয়ে যেসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাই এই টনসিল দুটোর কাজ। আর সংক্রমণের কারণে টনসিল ফুলে গেলে সে অবস্থাকে টনসিলাইটিস বলে।
এখন করোনা মহামারির মধ্যেও অনেকেরই টনসিলাইটিস সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে অনেক মানুষকে এই রোগ ভোগায়। টনসিল সংক্রমণের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার কারণে টনসিলাইটিস হয় ১৫-৩০ শতাংশ। এই সমস্যা যেকোনো বয়সি মানুষেরই হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের এই সমস্যা দেখা দেয়।
টনসিলাইটিস এক দুই সপ্তাহের মধ্যেই ওষুধ সেবন ছাড়া সেরে যেতে পারে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা ও ভোগান্তি নিয়ে আসে এই টনসিলাইটিস। এক্ষেত্রে ঘরেই কিভাবে এই অসুস্থতা সারাতে পারবেন, তা জানি চলুন।
প্রচুর তরল পান করতে হবে: যদি টনসিলাইটিসের কারণে আপনার তীব্র গলা ব্যথা করে, তাহলে সেক্ষেত্রে গরম পানি, স্যুপ, চা পান করুন। উপকার পাবেন।
ঠান্ডা খাবার খাওয়া: টনসিলের ব্যথা বেশি হলে ঠান্ডা আইসক্রিম বা দই এর মতো নরম খাবার খেতে পারেন। এতে সাময়িক স্বস্তি পাবেন। আরেকটা উপায় হলো মিন্ট বা ম্যানথল যুক্ত ক্যান্ডি খাওয়া বা চুইংগাম চাবানো। এতে স্বস্তি পেতে পারেন।
শক্ত খাবার না খাওয়া: টনসিলাইটিসের সময়ে শক্ত খাবার বর্জন করুন। এ সময় চিপস, ক্র্যাকার্স, টোস্ট, আপেল, গাজর এসব খাওয়া পীড়াদায়ক হতে পারে।
লবণ পানি দিয়ে কুলকুচা করা: এক গ্লাস গরম পানিতে চামচের চারভাগের এক ভাগ লবণ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর সেই পানি দিয়ে গার্গল বা কুলকুচা করুন। এতে টনসিলাইটিসের ব্যথা কমবে। দিনে কয়েকবার এই কুলকুচা করলে উপকার পাবেন। শিশুদের এরকম কুলকুচা না করাই ভালো। কারণ তাতে লবণ পানির কারণে শ্বাস আটকে যেতে পারে তাদের।
ঘরের আর্দ্রতা বাড়াতে হবে: ঘরের গরম পরিবেশ টনসিলাইটিসের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে হিউমিডিফায়ার ডিভাইস ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের এই যন্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই, তারা গরম পানিতে গোসল করতে পারেন।
জোরে কথা বলা পরিহার করুন: অনেকে টনসিলাইটিসের কারণে গলার অস্বস্তি দূর করতে জোরে কথা বলা বা কাশি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে উল্টো পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। তাই সে সময় কথা কম বলার চেষ্টা করে গলাকে বিশ্রাম দেয়া উচিত। আর কথা বলতে খুব সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রচুর বিশ্রাম নিন: যাদের টনসিলাইটিসের সমস্যা আছে, তাদের প্রচুর বিশ্রাম নেয়া উচিত। কারণ বিশ্রামের মাধ্যমেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো শরীর লড়াই করতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?: টনসিলাইটিসের কারণে যদি গলা ব্যথা দুই দিনের বেশি থাকে, কোনো কিছু খেতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, জ্বর আসে বা বাড়ে কমে, খুব দুর্বল বা ক্লান্তি অনুভূত হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুদের টনসিলাইটিস হলে: টনসিলাইটিসে আক্রান্ত কেউ আশেপাশে থাকলে, শিশুকে তার কাছ থেকে দূরে রাখুন, কারণ এটি সংক্রামক। আর শিশুদের এই সমস্যা কখনো দেখা দিলে ওই সময় তাকে প্রচুর তরল পানীয় পান করতে দেয়া ও বিশ্রামে রাখা জরুরি। শিশু গলা ব্যথার কথা বললে তাকে প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
ঢাকা/ফিরোজ