দেহঘড়ি

করোনায় শ্বাসকষ্ট: যেভাবে শুয়ে থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে

করোনাভাইরাস মহামারিতে ফ্রন্টলাইনের কিছু চিকিৎসক কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে একটি সহজ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছেন। এই পদ্ধতিটা হলো প্রোনিং। এটা আমাদের অপরিচিত নয়। এই পদ্ধতিতে রোগীদেরকে প্রোন পজিশনে বা উপুড় করে শোয়ানো হয়, বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার কাউন্টিতে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ হসপিটালের ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাক স্টুয়ার্ট।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীরা এই পদ্ধতিতে উপকৃত হয়েছেন। কোভিড-১৯ রোগী বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসক্রিয়ায় সহায়তার জন্য যাদেরকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর সুবিধা দেয়া যাচ্ছে না তাদের জীবন প্রোনিংয়ের মাধ্যমে রক্ষা করা যেতে পারে।

প্রোনিং কিভাবে কাজ করে? এ প্রসঙ্গে ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘রোগীকে পেটের ওপর শোয়ানো হলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়, কারণ প্রোন পজিশনে রক্তে অধিক অক্সিজেন পৌঁছতে পারে।’ মূলত শরীরের অ্যানাটমির ফাংশনের কারণে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে শ্বাসক্রিয়া সহজ হয়। মানব শরীরে ফুসফুস টিস্যু সামনের চেয়ে পেছনে বেশি থাকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে যেসব অস্বাভাবিক তরল নিঃসরিত হয় তা পেছনের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু পেছনে ফুসফুস টিস্যু বেশি থাকে বলে এসব তরল ফুসফুস কার্যক্রমে বেশি বাধা দেয়। কিন্তু রোগী উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে মাধ্যাকর্ষণের কারণে এসব তরল নিচের দিকে ছুটে যায় ও ফুসফুস কার্যক্রমের ওপর কম প্রভাব পড়ে, এর ফলে শ্বাসকার্য সহজ হয়, বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ফুলারটনে অবস্থিত সেন্ট জুডি মেডিক্যাল সেন্টারের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের মেডিক্যাল ডিরেক্টর হ্যারি পেলেড।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম জটিলতা হলো অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (এআরডিএস), যা জীবননাশের কারণ হতে পারে। এআরডিএসে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ও দ্রুত বেড়ে যায়। এই সমস্যাতেও প্রোনিং বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তিকৃত ৪০ শতাংশ গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীর এআরডিসএস ছিল এবং এআরডিএস নিয়ে ৫০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।

এআরডিএস সেসব রোগীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও পালমোনারি এডিমা (হৃদরোগ থেকে ফুসফুসে তরল জমে যাওয়া) রয়েছে। ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘এআরডিএসের চিকিৎসায় অনেক বছর ধরে প্রোনিং ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে উল্লেখযোগ্য সফলতাও পাওয়া গেছে।’ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত ফ্রেঞ্চ চিকিৎসকদের গবেষণায় পাওয়া গেছে, এআরডিএসের যে গ্রুপকে উপুড় করে শোয়ানো হয়েছিল তাদের মধ্যে মৃত্যুহার চমকে ওঠার মতো কম ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ড হসপিটালের কিছু কোভিড-১৯ রোগীকে উপুড় করে শোয়ানোতে শ্বাসকষ্ট কমে গেছে ও লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন পড়েনি। শুধু গুরুতর রোগী নয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা হালকা শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন তারাও প্রোনিংয়ে উপকার পেতে পারেন। আপনার কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে মৃদু শ্বাসকষ্ট অনুভূত হলে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে পারেন- হয়তো এতে গুরুতর অবস্থা প্রতিরোধ হবে অথবা আইসিইউতে যাওয়ার দরকার পড়বে না।

তথ্যসূত্র: হেলথ

 

ঢাকা/ফিরোজ