দেহঘড়ি

হৃদরোগের পাঁচ ঝুঁকি

মানুষের হার্ট বা হৃদপিণ্ড হলো এমন একটি অঙ্গ যা সংবহনতন্ত্রের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে। এর ফলে শরীরের টিস্যু প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ দূর হয়।

কিন্তু হার্ট রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে টিস্যুগুলো মারা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা কিছু হার্টের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করে তাতে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এখানে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।

কম ঘুমানো: ঘুমের সময় শরীর ডিএনএ মেরামত, ভিটামিনের মাত্রা পুনরুদ্ধার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করতে খুব পরিশ্রম করে। গবেষকরা ১৫,০০০ লোককে ১৪ বছর পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন (যেমন- নিয়মিত শরীরচর্চা করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও ধূমপান না করা) করেছেন এমন মানুষদের হৃদরোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৬৭ শতাংশ কম ছিল। কিন্তু যদি তারা প্রতিরাতে সাত ঘণ্টা বা আরো বেশি ঘুমাতেন, তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৮৩ শতাংশ কমে যেত। কারো হৃদরোগের ঝুঁকি এত বেশি কমলে আমরা ধরে নিতে পারি যে তিনি প্রায় হার্ট অ্যাটাক প্রুফ। তাই হার্ট অ্যাটাক এড়াতে ঘুমকে প্রাধান্য দিন। নির্বিঘ্ন ঘুমাতে রুমকে শীতল, অন্ধকার ও কোলাহলমুক্ত করুন।

কম সুখ: যারা জীবন নিয়ে অসুখী তাদেরও হৃদরোগ তথা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি। গবেষকরা হৃদরোগের ঝুঁকি পরিমাপ করতে কিছু মানুষকে ২৫ বছর পর্যবেক্ষণে রাখেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ভালো থাকা, আশাবাদীতা ও জীবন সন্তুষ্টি পরিমাপ করা হয়। ২৫ বছর পর দেখা গেল, সবচেয়ে সুখী ও আশাবাদী মানুষদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কম ছিল। আশাবাদী ও সন্তুষ্ট মানুষেরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন।

প্রচুর বায়ুদূষণ: দূষিত বাতাসের কেমিক্যাল শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ ঘটাতে পারে। অক্সিডেশন বাড়লে হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অবস্থা জং ধরার মতো হয়ে যায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারের গবেষকদের গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেখানে যানবাহনের ধোঁয়া ও শোরগোল বেশি ছিল সেখানে ১০ বছরে হৃদরোগ জনিত মৃত্যুর হার ৬ শতাংশ বেশি ছিল। ২০০৮ সালে সামার অলিম্পিকসের জন্য বায়ুর মান বাড়াতে বেইজিংয়ের ফ্যাক্টরিগুলো দুই মাস বন্ধ করে দেয়া হয়। দেখা গেল, সেখানকার নাগরিকদের রক্তচাপ ও ধমনীর স্বাস্থ্যে উন্নতি এসেছে। হার্টকে রক্ষা করতে ধূমপায়ী-যানবাহন থেকে দূরে থাকুন। কোনো স্থানের বায়ুর মান খারাপ হলে সেখানে না যাওয়াই ভালো।

বিষাক্ত ধাতব পদার্থ: যারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের তিন-চতুর্থাংশের রক্তে উচ্চমাত্রায় লিড, মার্কারি ও ক্যাডমিয়ামের মতো কেমিক্যাল পাওয়া গেছে। একটি গবেষণায় ১৪,০০০ হার্ট অ্যাটাক সারভাইভারের ধাতব পদার্থ দূর করতে সাপ্তাহিক ইনফিউশন বা চেলাশন থেরাপি দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বিষাক্ত কেমিক্যাল থেকে হার্টকে বাঁচাতে অর্গানিক ফুড খেতে, শাকসবজিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে ও ট্যাপের পানি ফিল্টার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ডায়েটে বেশি করে সবুজ শাকসবজি রাখুন। সবুজ শাকসবজি খেলে লিভার বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা পায়।

মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ করটিসোল ও অ্যাড্রিনালিন বৃদ্ধি করে। এসব হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় ও রক্তনালীকে অনমনীয় করে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও রোগে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। গবেষকরা ২০১ জন হৃদরোগীকে হার্ট সুরক্ষার পরামর্শ তথা মেডিটেশনের নির্দেশনা দেন। পাঁচ বছর পর দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমেছে। মানসিক চাপ কমাতে ইয়োগাও করতে পারেন। মেডিটেশন ও ইয়োগা ছাড়াও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের আরো অনেক উপায় রয়েছে। আপনার যেটা ভালো লাগে সেটা করুন, যেমন- বাগান করতে পারেন।