দেহঘড়ি

হার্ট রেট কখন বিপজ্জনক?

হার্ট হচ্ছে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন। হার্ট রেট তথা হৃদস্পন্দন হার ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মনে এই প্রশ্ন আসা অস্বাভাবিক নয় যে, হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিক হার কত এবং কখন হৃদস্পন্দনের হারকে বিপজ্জনক বিবেচনা করা হবে? 

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হার (রেস্টিং হার্ট রেট) প্রতিমিনিটে ৬০ থেকে ১০০ স্পন্দন। শিশুদের হৃদস্পন্দন হার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তুলনায় বেশি। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ছয় থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশুর স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হার (রেস্টিং হার্ট রেট) প্রতিমিনিটে ৭০ থেকে ১০০ স্পন্দন।

হৃদস্পন্দনের হার খুব দ্রুত হলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিমিনিটে ১০০ এর বেশি হৃদস্পন্দন হলে ট্যাকিকার্ডিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ব্যক্তির বয়স ও সমগ্র স্বাস্থ্যকে মূল্যায়ন করেও হৃদস্পন্দন হার খুবই দ্রুত কিনা তা নির্ধারণ করা হয়।

অনেক ধরনের ট্যাকিকার্ডিয়া রয়েছে। এর শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে কারণ ও হার্টের কোন অংশ প্রভাবিত হয় তার ওপর ভিত্তি করে। কখনো কখনো কিছু সময়ের জন্য ট্যাকিকার্ডিয়া হতে পারে। ট্যাকিকার্ডিয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ হলো- অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ, ক্লান্তি, অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণ, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, জ্বর, শ্রমসাধ্য শরীরচর্চা বা কঠোর পরিশ্রম, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ধূমপান ও ড্রাগসের ব্যবহার।

হৃদস্পন্দনের হার খুব ধীরে হলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ব্রাডিকার্ডিয়া বলে। সাধারণত প্রতিমিনিটে ৬০ এর কম হৃদস্পন্দন হারকে ব্রাডিকার্ডিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা অ্যাথলেটিস ও নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের ক্ষেত্রে প্রতিমিনিটে হৃদস্পন্দন হার ৬০ এর কম হলেও তা স্বাভাবিক ও এমনকি স্বাস্থ্যসম্মতও। ব্রাডিকার্ডিয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ হলো- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অন্যকোনো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যা।

* হৃদস্পন্দনের হার যখন বিপজ্জনক ট্যাকিকার্ডিয়া ও ব্রাডিকার্ডিয়া উভয়েই কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। একটা মানুষের ট্যাকিকার্ডিয়া অথবা ব্রাডিকার্ডিয়া যেটাই থাকুক না কেন, তাকে ধরে নিতে হবে যে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে- যেটা চিকিৎসক দ্বারা শনাক্ত করে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এসব অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে ট্যাকিকার্ডিয়া হতে পারে- রক্তস্বল্পতা, জন্মগত হৃদরোগ, রক্ত চলাচলকে প্রভাবিত করে এমন হৃদরোগ, হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড গ্রন্থি কর্তৃক খুব বেশি হরমোন উৎপাদন ও হার্টে ইনজুরি (যেমন- হার্ট অ্যাটাক থেকে)।

অন্যদিকে এসব অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে ব্রাডিকার্ডিয়া হতে পারে- জন্মগত হৃদরোগ, হার্টে ড্যামেজ (যেমন- বয়স্কতা, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক থেকে), হাইপোথাইরয়েডিজম বা শরীর কর্তৃক পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের অক্ষমতা, লুপাস বা বাতজ্বরের মতো প্রদাহজনিত রোগ ও মায়োকার্ডাইটিস বা হার্টের সংক্রমণ।

মাঝেমধ্যে হৃদস্পন্দনের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমবেশি হতেই পারে। কিন্তু হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক হার দীর্ঘসময় বিরাজমান থাকলে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে, যেমন- রক্ত জমাট হওয়া, হার্ট ফেইলিউর বা হার্ট কর্তৃক শরীরে রক্ত সরবরাহে অক্ষমতা, ঘনঘন মূর্ছা যাওয়া ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্টের বৈদ্যুতিক কার্যক্রমে বিঘ্নতা (কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যুও হতে পারে)।

* কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন? আপনার হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন হার প্রতিনিয়ত ১০০ এর উপর বা ৬০ এর নিচে হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। হৃদস্পন্দনের হারে অস্বাভাবিকতা দেখলে এবং সেইসঙ্গে এসব উপসর্গের কোনোটা থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত- শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হওয়া, মাথাঘোরানো বা চেতনা হারাতে যাচ্ছে এমন মনে হওয়া, বুকে ধুকপুকানি বা ধড়ফড়ানি এবং বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি। এখানে কয়েকমিনিটের চেয়ে বেশি বুক ব্যথা, শ্বাসক্রিয়ায় কাঠিন্যতা ও চেতনা হারানো হলো জরুরি উপসর্গ। এসব উপসর্গে জরুরি সেবা নিতে হবে। চিকিৎসকেরা প্রকৃত সমস্যা শনাক্ত করতে ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), ইকোকার্ডিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান ও ব্লাড টেস্ট করতে পারেন। ডায়াগনস্টিক টেস্টের রেজাল্ট দেখে রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হবে অথবা কার্ডিওলজিস্টের কাছে রেফার করা হতে পারে।