দেহঘড়ি

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সহজ উপায়

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের মতে, এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে ভাইরাসটির নতুন ধরন পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশে সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট বেশি ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের সচেতনতার মাত্রা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার, যাতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের মতে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর একটি সহজ উপায় রয়েছে। আর সেটি হলো পর্যাপ্ত ঘুম।

নতুন একটি গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুমালে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি এবং আক্রান্ত হলেও মারাত্মক পরিণতির আশঙ্কা কমতে পারে। গবেষণাটিতে ছয়টি দেশের ২,৮০০ জন সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা করোনা রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন। দেখা গেছে, যারা কয়েক ঘণ্টা বেশি ঘুমিয়েছেন, তাদের প্রতি ঘণ্টা বাড়তি ঘুমের জন্য কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি ১২ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে যাদের রোগীর সেবার চাপ বেশি ছিল, অর্থাৎ পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেননি তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি ছিল। তারা দীর্ঘসময় অসুস্থ ছিলেন এবং মারাত্মক পরিণতির হারও তাদের বেশি ছিল।

দি ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ স্টিভেন হোলফিঙ্গার বলেন, ‘ঘুমের ঘাটতি, তীব্র ঘুমের সমস্যা ও সেবার চাপে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে এসব রিস্ক ফ্যাক্টর সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে আরো গবেষণা প্রয়োজন।’

গবেষণাটি সম্প্রতি বিএমজে নিউট্রিশন, প্রিভেনশন অ্যান্ড হেলথ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এটিই প্রথম গবেষণা নয়। চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ঘুমিয়েছেন তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর জটিলতা বেশি ছিল। গবেষকরা বলছেন, মেলাটোনিন হরমোন কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমাতে পারে। এই হরমোন মানুষের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের অভিমত হলো, সংক্রমণের সম্ভাবনা নাকচ করতে রাতে ভালো বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে।

এই মহামারিতে অনেক কারণেই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যে কারণে কয়েকটি গবেষণার আলোকে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে, ঘুমের পরিমাণ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে বা কমাতে পারে। তবে এটা ঠিক, পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। আশার কথা এখানেই। 

এমনিতে যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, এই মহামারিতে উদ্বেগ-আতঙ্কে তাদের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরামর্শ হলো, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিরাতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। যারা ব্যস্ততার কারণে রাতে যথেষ্ট ঘুমাতে পারেন না, তারা রুটিনে পরিবর্তন এনে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমানোর কথা বিবেচনা করতে পারেন। যদি ঘুম না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

গবেষকরা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘুমকে গুরুত্ব দিতে বলছেন, তাই বলে প্রধান স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে অনুৎসাহিত করছেন না। মাস্ক পরুন, বাইরে থেকে এসে হাত ধুয়ে নিন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং সম্ভব হলে টিকা নিন।