দেহঘড়ি

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

দেশে আবারও ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণটিকে মোটেই অবহেলা করা যাবে না, কারণ গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কারণে হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কামড়ালে এই জ্বরের কবলে পড়তে হয়। এখানে ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

জ্বর আসলে, তা ডেঙ্গু জ্বর কিনা তা বুঝতে কিছু উপসর্গের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন- শরীরে শীতলতা অনুভব করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, নিচের পিঠে ব্যথা, পেশি ব্যথা, হাড়ের সংযোগস্থানে ব্যথা, ফুসকুড়ি, ক্লান্তি, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ত্বক-চোখ লাল হওয়া।

ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হওয়ার প্রথম কিছু ঘণ্টায় পায়ে ও হাড়ের সংযোগস্থানে ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে। জ্বর খুব দ্রুত বেড়ে গিয়ে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে। এসময় হৃদস্পন্দন হার ও রক্তচাপ কম থাকে। মুখমণ্ডলে লাল অথবা গোলাপী র‍্যাশ ওঠে, যা পরে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘাড় ও কুঁচকির লসিকাগ্রন্থি প্রায়সময় ফুলে থাকে।

বেশি মাত্রার জ্বর ও ডেঙ্গুর অন্যান্য লক্ষণ ২-৪ দিন থাকে, তারপর ঘাম ছেড়ে দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। দ্বিতীয়বার দ্রুত জ্বর বাড়ার আগে প্রায় একদিন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে ও নিজেকে সুস্থ মনে হয়। পরবর্তীতে মুখমণ্ডল ব্যতীত সারা শরীরে চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি ওঠে থাকে। হাতের তালু ও পায়ের তালু উজ্জ্বল লাল হতে পারে ও ফুলে যেতে পারে।

কখনো কখনো ডেঙ্গু সংক্রমণ খুবই মারাত্মক অথবা প্রাণনাশক হয়ে থাকে। এটাকে বলে সিভিয়ার ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণের ৩-৭ দিন পর সিভিয়ার ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যেসব লোক আগে ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের সিভিয়ার ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি।

সিভিয়ার ডেঙ্গুর উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব বা ঘাম হওয়া, দ্রুত নাড়ি স্পন্দন এবং ঘুম ঘুম ভাব/চেতনা হারানো। সিভিয়ার ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখলে এক মুহূর্তও দেরি না করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে।

ডেঙ্গুর ঘরোয়া চিকিৎসা

কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের ডেঙ্গু জ্বরকে কাবু করা সম্ভব। যেমন- 

* বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন অথবা তরল জাতীয় খাবার খান। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা কম হবে।

* প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পেঁপে পাতার রস পান করুন, কারণ ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। পেঁপে পাতার রস সংক্রমণ তাড়ানোর ক্ষমতাও বাড়াতে পারে।

* পেয়ারার শরবত পান করুন। এই পানীয়ের ভিটামিন সি রোগদমনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করবে।

* এক মগ গরম পানিতে মেথি বীজ ভিজিয়ে পানীয়টি ঠান্ডা করে পান করুন। এতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও রোগ উপশমের ক্ষমতা বাড়বে।

* রোগের বিরুদ্ধে ভালো লড়াই করে এমন খাবার বেশি করে খান, যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।শক্তিশালী রোগদমনতন্ত্রের কাছে সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ সহজেই পরাস্ত হয়।

* রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রসও পান করতে পারেন। এটি শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগদমন ক্ষমতা বর্ধক শক্তিও আছে।

* তুলসি পাতাকে গোল মরিচের সঙ্গে পানিতে সিদ্ধ করে পানীয়টিকে ঠান্ডা করে পান করতে পারেন। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালো লড়াই করতে পারে। তুলসি পাতা চাবালেও রোগদমনতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

* ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পুদিনা পাতার রসও বেশ কার্যকর। এটি সংক্রমণের জ্বর কমাতে পারে, রোগদমনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারে এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পারে।

* ডেঙ্গু উপশমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো বার্লি চা। এটি ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ফোলেট,  প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ও মিনারেলে সমৃদ্ধ। এসবকিছু রক্তের প্লাটিলেট ও লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে একত্রে কাজ করে।

পড়ুন: ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা খাবেন