দেহঘড়ি

মাংস যেভাবে খেলে সুস্থ থাকবেন

অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদে গরুর মাংস কিছুটা বেশি খাওয়ার ইচ্ছা সবারই থাকে। কিন্তু এসময় অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত মাংস খেয়ে ফেলেন। এর ফলে পেটের সাময়িক গন্ডগোলে ভুগে থাকেন। পরিণতি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, অতিরিক্ত মাংস খেলে কিছু মারাত্মক রোগেরও ঝুঁকি রয়েছে।

মাংস নিঃসন্দেহে পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। তাই বলে সীমা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে অস্বাস্থ্যকর চর্বিও রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে দৈনিক মাংস খাওয়ার পরিমাণ ১০০ গ্রামের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত।

চেষ্টা করুন তিন বেলা মাংস না খাওয়ার। রাতে গরু বা খাসির মাংস এড়িয়ে চলাই ভালো।

মাংস কেবল নিজেই নয়, কিভাবে রান্না করা হচ্ছে তার ভিত্তিতেও স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। সাধারণত প্রচুর পরিমাণে শুকনো মরিচের গুঁড়া, তেল ও মসলা দিয়ে কোরবানির মাংস রান্না করা হয়। মাংসকে যথেষ্ট সুস্বাদু করার চেষ্টা চলে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে মাংসেও প্রাকৃতিক তেল রয়েছে, তাই অতিরিক্ত তেলে মাংস রান্না করা অযৌক্তিক বা অনুচিত। 

পেটের অস্বস্তি এড়াতে মাংস রান্নার উপকরণ সীমিত রাখতে হবে। এছাড়া রান্নার উপকরণে কিছু পরিবর্তনও মাংসকে স্বাস্থ্যকর করতে পারে, যেমন- শুকনো মরিচের গুঁড়ার পরিবর্তে কাঁচা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন। মাংস রান্না হয়ে গেলে কিছু অলিভ অয়েল দিতে পারেন। এটি হজমে সাহায্য করে।

তাড়াহুড়ো করে মাংস রান্না করবেন না, আগে ভালোভাবে রক্ত দূর করে ফেলুন। অন্যথায় এটি পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি গর্ভপাতও ঘটাতে পারে।

কোরবানির ঈদে শুধু মাংস খাবেন তা নয়, সালাদ-সবজিও খেতে হবে। শুধু মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ধরে যেতে পারে। সবজিতে থাকা ফাইবার মাংসের চর্বি হজমে সাহায্য করে। এছাড়া সবজি থাকার কারণে মাংস খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমানো যায়।

মাংস রান্নায় লেবুর রস ব্যবহারেও বিশেষ উপকার পেতে পারেন। লেবুর রসের সংস্পর্শে মাংসের সংযোজক কলা ভেঙে যায়, যার ফলে মাংস নরম হয়। নরম মাংস সহজে হজম হয়। তবে মনে রাখবেন, লেবুর রস ব্যবহারে মাংসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। মাংস খাওয়ার পর আনারস বা পেঁপে খেতে পারেন। উভয় ফলে এমন এনজাইম রয়েছে যা মাংসকে দ্রুত হজম হতে সাহায্য করতে পারে। মাংসে বিশেষ স্বাদ আনতে কোনোকিছু অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না, কারণ এটা ক্ষতিকারক হতে পারে।

কোরবানির ঈদে কোষ্ঠকাঠিন্য বা বদহজম এড়াতে ফলও খেতে পারেন, বিশেষ করে আঁশ সমৃদ্ধ ফল। আমাদের শরীরে ফল সহজে হজম হয়, অর্থাৎ ফল হলো সহজপাচ্য খাবার। ভারতীয় চিকিৎসক ভাসন্ত লাদের মতে, শরীরে সহজে হজম হয় না এমন খাবারের সঙ্গে সহজপাচ্য খাবার খেলে হজমে উন্নতি আসে। এসময় আলুর মতো শ্বেতসার জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। মাংসের প্রোটিন ও শ্বেতসার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন এড়িয়ে চলুন, যেমন- গরুর মাংস খেলে ডিম খাবেন না। এটা ডা. লাদের পরামর্শ।

কোরবানির ঈদে পর্যাপ্ত পানি পানের গুরুত্ব বেশি। পর্যাপ্ত পানি পানে হজমে সহজতা আসে এবং বদহজম, পেটফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের আশঙ্কা কমে যায়। শরীরে ইউরিক এসিডের সমস্যা থাকলে মাংস খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মাংসকে কিভাবে রান্না করা হয়েছে তাও রোগের অবস্থা গুরুতর করতে পারে। যেমন- মাংসে বেশি লবণ দিলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতি হতে পারে। একইভাবে মাংসের চর্বিও কিছু রোগকে ভয়াবহ করতে পারে। তাই আপনার কোনো রোগ থাকলে কী পরিমাণ মাংস খেতে পারবেন ও কীভাবে রান্না করলে ভালো হবে তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোরবানির ঈদে যেহেতু মাংস বেশি খাওয়া হয় তাই অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে খাওয়ার পরপরই সেটা করতে যাবেন না। এতে ফলাফল উল্টো হতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি