রাইজিংবিডি স্পেশাল

চূড়ান্ত অনুমোদন পাচ্ছে বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী

হাসান মাহামুদ : প্লাস্টিক শিল্প উদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী’ অবশেষে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

 

পরিকল্পনা কমিশনের একনেক অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি সভার কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। আগামীকালের সভায় মোট ১২টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে কার্যতালিকায় সাত নম্বরে রয়েছে ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী’ প্রকল্পটি। 

 

রাজধানীর প্লাস্টিক কারখানাগুলোকে পরিকল্পিতভাবে একটি শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের দাবিটি দীর্ঘদিনের। এ জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আওতায় প্লাস্টিক শিল্প নগরী স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

 

এ ব্যাপারে শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে এই প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপন করা হচ্ছে। ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশে বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর এ শিল্পনগরী গড়ে উঠবে। এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিকের উদ্যোগে এটি স্থাপিত হবে।

 

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এ প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে ৩৪৮টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা যাবে। এতে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক শিল্প গড়ে তোলার অভিযাত্রাকে বেগবান করবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন।

 

প্লাস্টিক শিল্প একটি বিকাশমান খাত। কাঠের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানসম্মত প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

 

বিসিক সূত্র জানায়, দেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ২০ ভাগ হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা মোকাবিলায় দেশেই এই আন্তর্জাতিক মানের প্লাস্টিক শিল্প নগরী গড়ে ওঠছে। ইতিমধ্যে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এ খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১২ লাখ মানুষ।

 

এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এ খাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

তারা জানান, দেশের চাহিদা মিটিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ, এশিয়ার চীন, ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক পণ্য প্রচ্ছন্ন রপ্তানির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি প্লাস্টিক পণ্য।

 

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে বলা হয়, সরাসরি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ১২তম অবস্থানে রয়েছে। প্রচ্ছন্ন রপ্তানিসহ ধরলে এই অবস্থান ৫ম।

 

পণ্যের নকশায় বৈচিত্র্য এবং গুণগতমানের জন্য বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি প্রতিবছর বাড়ছে। পণ্য বহুমুখীকরণসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে প্লাস্টিক শিল্পখাতে রপ্তানি ২০২১ সালের মধ্যে ৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৫/রফিক