রাইজিংবিডি স্পেশাল

চুক্তিভিত্তিকদের সুবিধা বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা

কে এম এ হাসনাত : চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধা বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

 

চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এসব চাকরিজীবীকে সুবিধা দিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী সব ধরনের সুবিধা পাবেন। আর এ জন্য তাদেরকে সরকারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে না।

 

গত ২৬ জানুয়ারি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগাপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ওই প্রজ্ঞাপন বলা হয়, ‘চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মচারিদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ বিষয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ৭ নম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই প্রজ্ঞাপনের ১ অনুচ্ছেদ বলা হয়, ২০১৫ সালের ১ জুলাইয়ের পূর্বে চুক্তিভিক্তিক নিয়োজিত কর্মচারি যাদের চুক্তির মেয়াদ ১ জুলাই, ২০১৫ বা তারপর পর্যন্ত অব্যাহত আছে সরকারের সাথে পুনরায় চুক্তি সম্প্রদান করতে হবে।

 

এই চুক্তি করা সাপেক্ষে তাদের বেতন ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ হতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের উক্ত তারিখে প্রচলিত বেতন স্কেলে নির্ধারণ করতে হবে। তারা ১ জুলাই ২০১৫ থেকে  চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫’র অনুচ্ছেদ ১(৩)(ক) এবং ১(৩)(গ) অনুযায়ী বর্ধিত হারে বেতন এবং সরকারের সাথে সম্প্রাদিত চুক্তি অনুযায়ী তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ বা তারপরে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত হয়েছেন তাদের বেতন ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য হবে।’

 

প্রজ্ঞাপনের উল্লেখিত বিধান কার্যকর হলে নানা  ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় প্রজ্ঞাপনের ওই অংশটুকু পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘১ জুলাই ২০১৫ তারিখের পূর্বে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োজিত কর্মচারি যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়নি বলে উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ ১ এর বিধান মতে পুনরায় চুক্তি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সরকারের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি সম্প্রাদন করার শর্ত বিলুপ্ত করা যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয়। সে পরিপেক্ষিতে গত ২৬ জানুয়ারি তারিখের ৭ নম্বর প্রজ্ঞাপনের ১ অনুচ্ছেদে সরকারের সঙ্গে পুনরায়  চুক্তি সম্পাদনের শর্ত বিলুপ্ত করে নিম্নরূপ করা যেতে পারে।’

 

প্রস্তাবিত নতুন অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘১ জুলাই ২০১৫ তারিখের পূর্বে চুক্তি ভিত্তিক  নিয়োজিত  কর্মচারি যাদের চুক্তির মেয়াদ ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ বা তারপর পর্যন্ত অব্যাহত আছে তাদের বেতন ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ হতে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োজিত পদের উক্ত তারিখে প্রচলিত বেতন স্কেলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। তারা ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ থেকে  চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫’র অনুচ্ছেদ ১(৩)(ক) এবং ১(৩)(গ) অনুযায়ী বর্ধিত হারে বেতন এবং সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ বা তার পরে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছেন তাদের বেতন ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।’

 

সূত্র জানায়, চাকরি জীবনের নির্ধারিত সময় শেষেও সরকার কিছু কিছু কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে তার কাজের পারিধি এবং প্রদেয় সুযোগ-সৃবিধা সব উল্লেখ থাকে।

 

সূত্র জানায়, বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রশাসনে এদের দাপটও অনেক বেশি। চুক্তিভিত্তিক এইসব কর্মকর্তারা যাতে নিয়মিত কর্মকর্তাদের মত সুযোগ সুবিধা পেতেই জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুসারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মচারিদের বেতন নির্ধারনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

 

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি এস আর ও নং ৩৬৯-আইন/২০১৫ এর মাধ্যমে ১লা জুলাই ২০১৫ খ্রিঃ তারিখ থেকে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ -কার্যকর হওয়ায় সরকারি/ স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানসহ প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন বেসামরিক পদে জনস্বার্থে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত হয়েছেন বা হবেন তাঁদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধাারণ বিষয়ে সরকার নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করেছে। 

 

১ জুলাই ২০১৫ তারিখ বা তার পরে যারা চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োজিত হবেন তাঁদের ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের অব্যহিত আগে আহরিত শেষ বেতন (Last Pay) চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অথবা উভয়পক্ষের সম্মতিতে সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত বেতনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে।

 

নির্ধারিত বেতন (চুক্তিভিত্তিক) হতে নির্ধারিত গ্রস পেনশন (কম্যুটেশন/সমর্পণ করার আগের অংক) এবং বিশেষ অতিরিক্ত পেনশন, যদি থাকে, বাদ যাবে না।

 

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকালীন চাকরির জন্য কোন ইনক্রিমেন্ট, আনুতোষিক, বর্ধিত পেনশন প্রদেয় হবে না।

 

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ছাড়া অন্যান্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বেতন-ভাতা ইত্যাদি সংক্রান্ত  শর্তাবলি যথারীতি প্রতিক্ষেত্রে গুণাগুণ বিবেচনা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থির করা হবে এবং তদানুযায়ী চুক্তিপত্র সম্পাদিত হবে।

 

এ প্রজ্ঞাপনের পরিপন্থী পূর্ববর্তী সব আদেশ/স্মারক নির্দেশাবলির সংশ্লিষ্ট অংশ বাতিল বলে গণ্য হবে, তবে এ প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পূর্বের জারীকরা সব স্মারক বলবৎ থাকবে।

 

বেতন-ভাতা সম্পর্কে আদেশে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সত্তেও চুক্তি মোতাবেক দেয় বেতন, ভাতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় জারি করা আদেশ প্রযোজ্য হবে।

 

এস আর ও নং ৩৬৯-আইন/২১০৫ অনুযায়ী এ প্রজ্ঞাপন ১ জুলাই ২০১৫ তারিখে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে।রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/হাসনাত/নওশের