রাইজিংবিডি স্পেশাল

রমজানের আগেই ছোলার দাম ১০০ টাকা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে- বাণিজ্যমন্ত্রী এমন আশ্বাস দিলেও রমজান শুরু না হতেই বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এর মধ্যে চাহিদার শীর্ষে থাকা ছোলার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

 

শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, নিউমার্কেট, শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে জানা গেছে, গত বছর রমজানে যে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। তা এবার রমজান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকার। কোনো কোনো বাজারে ১০০ টাকা করেও বিক্রি করা হচ্ছে ছোলা।

 

আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে যে ছোলা খাওয়া হয়, তা শুধু রমজানের আগেই আমদানি করা হয়। এ কারণে বর্তমানে যে ছোলা খুচরা বাজারে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা পাইকারি বাজারে ৯৩ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসের ব্যবধানে ভোক্তা পর্যায়ে ছোলার দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। খুচরা বাজারে গত মাসে ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।

 

গত বছর এ সময়ে পাইকারি বাজারে ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। দামের পার্থক্য হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা।

 

এ ছাড়া এ বছর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ছোলা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গুদামে তুলেছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৫ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। আর বিগত ২০১৫ সালে বেশি আমদানি হওয়ায় ছোলার দাম অনেক কম ছিল। সেই বাড়তি ছোলা এখন রমজান উপলক্ষে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গত ২০১৫ সালে চাহিদার বেশি আমদানি হওয়ায় রমজানের আগে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি ছোলা বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৯০০ টাকা। সেই কারণে এ বছর অনেকেই ছোলা আমদানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

 

কাওরানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর শবেবরাতের পরই পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু এবার বেশ আগেভাগেই ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় রমজানে আর ছোলার দাম হয়তো বাড়ানো হবে না। এর ফলে ভোক্তারাও আর অভিযোগ করবে না যে রমজানে দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা পাইকার ও আমদানিকারকদের নতুন কৌশল।

 

প্রতি বছর রমজানে ছোলার চাহিদা ধরা হয় ৬০ হাজার টন। এর মধ্যে ৭ হাজার টন ছোলা উৎপাদন করা হয় দেশে। বছরে ৫৫ হাজার টন আমদানি করা হয়। তবে সারা বছর ছোলার ডালের চাহিদা থাকে ১ লাখ টনের বেশি। ছোলা আমদানি করেই ডাল বানানো হয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ লাখ ৪ হাজার টন ছোলার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সব ছোলা বিভিন্ন দামে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, গত মাসে আমদানি করা প্রতি কেজি ছোলা ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায় এসেছে। দেশের বাজারেও এ দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় গত এক মাস ধরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম ৯০০ ডলার হিসেবে কেজিতে ৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দাম বৃদ্ধির সুযোগে দেশের বাজারে ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৬/নাসির/বকুল