রাইজিংবিডি স্পেশাল

মাহে রমজানে সাহরি

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : মাহে রমজানের ১৯ রোজা আজ। দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছে মাগফেরাতের দিনগুলি। আর একদিন পরেই শুরু হবে রমজানের শেষ দশক ‘নাজাত’।

 

রোজা রাখার ফরজ ও মাহে রমজানের ফজিলতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি। আজ রোজায় সাহরির ফজিলত নিয়ে আলোকপাত করবো।

 

রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে কিছু পানাহার করার নাম ‘সাহরি’।

 

রোজা রাখার জন্য রাতের শেষদিকে উঠে সাহরি খাওয়া রাসুল (সা.) এর পছন্দনীয় কাজ, তথা সুন্নত। সাহরি খাওয়া ফরজ নয়। তাই সাহরি খেতে না পারলেও রোজা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

মহান আল্লাহ নিজেই পানাহার করার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘পানাহার কর যে পর্যন্ত প্রত্যুষে কালো রেখা হতে সাদা রেখা প্রকাশ হয়। (সুরা বাকারা- ১৮৭ আয়াত। অর্থাৎ সুবেহ সাদেক হওয়া পর্যন্ত সাহরি খাওয়ার শেষ সময়।

 

রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সাহরি খাওয়ায় অনেক বেশি বরকত রয়েছে।

 

হাদিস শরীফে আছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে। (সহিহ বুখারী)

 

আরেক হাদিসে আছে, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, তিনটি জিনিসে বরকত রয়েছে। জামাত, সারিদ ও সাহরিতে। (তাবারানী)

 

রোজা রাখার জন্য স্বয়ং মহানবী (সা.) নিজেই সাহরি খেতেন, সাহাবিদের সাহরি খাওয়ার জন্য বলতেন। কখনও সাহাবিদের একসঙ্গে নিয়ে সাহরি খেতেন এবং জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করতেন।

 

সাহরি তাড়াতাড়ি খাওয়া উত্তম কাজ নয়। রাসুল (সা.) সাহরিতে অপেক্ষা করা পছন্দ করতেন। এজন্য তিনি শেষ মুহূর্তে খাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। সাহরি খাওয়ার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা রাসুল (সা.) এর সুন্নতও।

 

হাদিসে আছে, হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে সাহরি খাই, এরপর তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী (রাবী) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আযান ও সাহরির মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? রাসুল (সা.) বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার পরিমাণ। (সহিহ বুখারী)।

 

আরেক হাদিসে রয়েছে, হযরত আবুজর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন- আমার উন্মত যতদিন ইফতার ত্বরান্বিত করবে এবং সাহরি বিলম্বিত করবে ততদিন তারা কল্যাণকর হয়ে থাকবে।

 

সাহরি খাওয়া উত্তম। মুসলমানদের ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই সাহরি পার্থক্য গড়ে দেয়।

 

হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের এ সিয়াম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সাহরি খাওয়া। (সহিহ মুসলিম)।

 

তাছাড়া পবিত্র রমজানে সাহরির সময় দোয়া কবুল হয়। তাবরানি সংকলিত হাদিস গ্রন্থের একটি হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, রাতে সাহরির সময় দোয়া কবুল হয়---।

 

রাসুলে পাক (সা.) সাহরি খাওয়াকে বরকতময় বলার অন্যতম কারণ হলো, সাহরি খাওয়ার ফলে রোজাদার দিনভর উপবাস থাকলেও ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান নিতে পারে।

 

প্রকৃতপক্ষে সাহরি ছাড়া রোজা রাখার বিধান দেওয়া হলে কী হতো। সাহরি খেয়েও আমরা অনেকেই ক্ষুধা ও ক্লান্তির কথা বলে থাকি। এজন্যই সাহরি রোজাদারের জন্য বরকতময় বলা হয়েছে।

 

রোজায় সাহরির আধ্যাত্মিক ফজিলত হচ্ছে, বান্দা সাহরি খাওয়া উপলক্ষে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ঘুম থেকে ‍ওঠেন। আর এসময় আল্লাহ পাক দুনিয়ার আসমানে এসে ডেকে ডেকে বলেন, কেউ কি আছে, যে আমায় ডাকছে ? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কেউ কি আছে, আমার কাছে ক্ষমা চায়? আমি তাকে মাফ করে দেবো।

 

এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ পাক বান্দার রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের জন্য অবিরত ডেকে যান। সাহরির সময় অনেক মূল্যবান ও বরকতপূর্ণ।

 

তাই সাহরি উপলক্ষে কেউ যদি এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন তাহলে তিনি সফল ও সার্থক। সাহরির আগে পরে সামান্য সময়ের জন্য হলেও আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করুন, আল্লাহ নিশ্চয়ই তার ডাকে সাড়া দেবেন।

 

আল্লাহ আমাদের রাসুল (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী সাহরি খেয়ে রোজা রাখার তওফিক দিন… আমীন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৬/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ